শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

মাদারীপুরে যাত্রীবাহী বাস খাদে

ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে ভাবেননি বিংসাম

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ২১:৩৫

সকালে একভাই ঢাকা আর আরেক ভাই রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের  হয়েছিলেন। এর মধ্যে ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান বিংসাম গোপালগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে ট্রেনে করে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে চলে যান। 

কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন, ইমাদ পরিবহনের ২০৩ নম্বর কোচটি মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। অজানা আশঙ্কায় বুকটি কেপে ওঠে বিংসামের। ট্রেন থেকে নেমে ছুটে আসেন দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে। এসেই শোনেন দুর্ঘটনায় নিহতদের তালিকায় তার ভাইয়ের নাম রয়েছে। মুহূর্তে বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। 

সকালে হাসিখুশিভাবে দুইভাই একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হন। তখনো ভাবেননি এ যাত্রায় হবে বড় ভাই আশফাকুজ্জামান লিংকনের শেষ যাত্রা। দুপুরে প্রিয় বড় ভাইয়ের লাশ নিয়ে বিংসাম খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এভাবে ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হবে ভাবেননি বিংসাম।

ইশরাকুজ্জামান বিংসাম রাজবাড়ীতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত। সপ্তাহের শেষ দিনে খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া আমতলার বাড়িতে আসেন। আবার রোববার ভোরে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

বিংসাম বলেন, তার বড় ভাই আশফাকুজ্জামান লিংকন পেশায় প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদার। ঢাকা ও খুলনায় তার কাজ চলছে। বিংসাম কর্মস্থল রাজবাড়ী ও ভাই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য খুব ভোরে বাড়ি থেকে বের হন।

তিনি বলেন, ইমাদ পরিবহনের ২০৩ নম্বর কোচের একটা সিটের পর তিনি ও পরের আসনে লিংকন বসেছিল। শুরুর থেকে গাড়িটির গতিবেগ বেশিই ছিল। প্রথমদিকে চালককে দ্রুত চালানোর জন্য নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা চালক কর্ণপাত করেননি। সকাল ৬টার দিকে গাড়িটি গোপালগঞ্জে পৌছায়। সেখান নামার পূর্বে ‘আমার ভাই ভালো থাকিস’ বলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

বিংসাম বলেন, লিংকন খুলনার প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদার ছিলেন। খুলনায় ও ঢাকায় তার কাজ চলছে। ঢাকার কাজ দেখার জন্য তিনি আমার সঙ্গে ইমাদ পরিবহনে রওনা হন। ভাইয়ের অকস্মাৎ মৃত্যুতে তিনি ভেঙ্গে পড়েছেন।

নিহত আশফাকুজ্জামান লিংকন। ছবি: ইত্তেফাক

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, দুইভাই একসঙ্গে যাত্রা করলাম। এখন ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরছি। বাবা-মাকে কী সান্ত্বনা দিব। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই আমার। রাতে এশার নামাজের পর পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। নিহত লিংকন নগরীর টুটপাড়া আমতলা মসজিদ এলাকার শাহাজাহান মোল্লার ছেলে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।

ইত্তেফাক/পিও