শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

বাস খাদে পড়ে নিহত ২০

‘নিরাপদ সড়ক চাই, এভাবে আর কারও স্বজন না হারাক’

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ২০:৩৪

‘দুলাভাই ছুটিতে তার দু’কন্যাকে দেখতে বাসায় এসেছিলেন। কর্মস্থলে ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনায় মারা যান। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। এভাবে আর কারও স্বজন না হারাক।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন বাস দুর্ঘটনায় নিহত রাশেদ আলীর (৩৮) শ্যালক শামস জেবিন। রোববার (১৯ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বাসে থাকা রাশেদ আলীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

নিহত রাশেদ আলী ডাচ বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সিনিয়র অফিসার তিনি সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার সখিপুর এলাকার বাসিন্দা। সারা (৮) ও সাফা (৫) নামে নিহতের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।

জানা যায়, রাশেদ আলী ছুটি কাটিয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ইমাদ পরিবহনের বাসে করে রওনা হয়েছিলেন। বাসটি মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ১৪ জন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও ২ জন মারা যান।

নিহতের আরেক শ্যালক বলেন, ‘মাঝে মাঝেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল হয়। কিন্তু কারও বিচার হয় না। যে কারণে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রভাবশালী মালিকরা আইনের ঊর্ধ্বে থাকে।

পুলিশ জানায়, রোববার (১৯ মার্চ) সকালে খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পদ্মাসেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটির সামনের একটি চাকা ফেটে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ও শিবচরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এদিকে নিহত ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। বাকি তিন জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। নিহতরা হলেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (৩৮), গোপালগঞ্জের গপিনাথপুর গ্রামের হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার (৩০), গোপালগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মণ্ডল (৪২), গোপালগঞ্জ সদরের বনগাঁও এলাকার সামছুল শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সজিব শেখ (২৬), গোপালগঞ্জ সরদরের পাঁচুরিয়া গ্রামের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়ার নিলফা গ্রামের কাঞ্চন শেখের ছেলে কবির শেখ, গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২০), গোপালগঞ্জ মুকসুদপুরের আদমপুরের আমজাদ আলী খানের ছেলে মাসুদ খান (৩২), খুলনার সোনাডাঙার শেখ আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২), খুলনার চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন মন্ডল, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব কুমার সাধু, খুলনার টুটপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের আমজেদ আলী সরদারের ছেলে রাশেদ সরদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার অনন্তপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জাহিদ ও গোপালগঞ্জ সদরের পুরান মানিকদি গ্রামের ইমাদ বাসের সুপারভাইজার মিনহাজ বিশ্বাস (২২)। 

নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ জানতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

মাদারীপুর রিজিওনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইওয়ের ডিআইজি সালমা বেগম বলেন, এ দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

ইত্তেফাক/এবি/পিও