রাজধানীর মতিঝিলস্থ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে ১৬ জন নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে এই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। তবে এই নিয়োগ বৈধ নয় উল্লেখ করে প্রতিনিধি দেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন বিষয়ে ১১ জন প্রভাষক ও পাঁচ জন প্রদর্শক নিয়োগ পরীক্ষায় মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়ার জন্য অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেন কলেজটির অধ্যক্ষ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মাউশি বলছে, ‘কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি ২২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখ বা তত্পরবর্তী সময়ে নিয়োগ প্রকাশের মাধ্যমে কোনো পদে নিয়োগ প্রদান করে তাহলে তা অবৈধ নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে। তাই উক্ত শিক্ষক পদে নিয়োগে মাউশি অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মনোনয়নের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, এনটিআরসিএ আইন যদি পুরোপুরি মানা হয়, তাহলে কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রভাষক পদে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ নেই। প্রভাষক নিয়োগের সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ। আর ঐ শিক্ষককে নিবন্ধিত হতে হবে। তবে আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী বলেন, ‘নিয়োগকৃত শিক্ষকদের কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। তাই আমরা নিয়োগ দিয়েছি। এই নিয়োগে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে তিনি জানান।’ আর কলেজটির গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেছেন, নিয়োগের বিষয়টি তিনি ততটা অবহিত নন। নিয়োগ কমিটির তিনি সদস্যও নন।
কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান। আর বিদ্যোত্সাহী সদস্য হিসেবে সরকারের একজন যুগ্মসচিবও রয়েছেন।
কী বলছে আইন : ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও কর্তৃপক্ষ আইন পাশ হয়। এই আইনের ধারা ৯ অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ-র অধীনে হবে তারও তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের সকল বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, মাধ্যমিক সংযুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সমপর্যায়ের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভোকেশনাল, টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল ও সংযুক্ত এবতেদায়ি, দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসমূহ এবং সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্রভুক্ত হইবে। আইনের ধারা-১০ (২) উপধারা-১ এ বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন, নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন করিবে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত শিক্ষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, নিবন্ধিত ও প্রত্যয়নকৃত না হলে কোনো ব্যক্তি কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে এনটিআরসিএ-র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এনামুল কাদের খান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, এনটিআরসিএ মূলত এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে এনটিআরসিএ-র সনদ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ বিষয়টি আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান বিষয়টি মানছে না বলে শুনেছি। তিনি বলেন, এভাবে নির্দেশ না মেনে সাময়িক সুবিধা হলে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলে বা জাতীয়করণ হলে ঐ সব শিক্ষক বিপাকে পড়বে। তারা আত্মীকরণ হবেন না।