দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবদের মধ্যে দক্ষতার অভাব রয়েছে। কারিগরি, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের (টিভিইটি) শিক্ষকদের মধ্যেও যোগ্যতার অভাব রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারের জন্য যুবদের প্রস্তুত করতে কারিগরি শিক্ষার জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে। এ জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ‘বৈশ্বিক বাজারের জন্য যুবদের প্রস্তুত করতে চাই কারিগরি শিক্ষার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, টিভিইটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক ড. মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, নানা দিক থেকে টিভিইটি এগিয়েছে। তবে আমাদের দক্ষতা আছে কিন্তু স্বীকৃতি নেই। টিভিইটি-এর শিক্ষকদের মধ্যেও দক্ষ জনবল তৈরির জন্য যথাযথ যোগ্যতার অভাব রয়েছে। ডিপলোমা কোর্সের ক্ষেত্রে বাধা এবং শূন্যতা কমাতে কাজ করতে হবে।
পাশাপাশি টিভিইটি-এর প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাবেরও পরিবর্তন আনতে কাজ করতে বলেন তিনি।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এস্তানুল কবির, জাতীয় কনসাল্টেন্ট এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, টিভিইটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার পরও যুবদের মধ্যে দক্ষতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অপরদিকে, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় নেই যথাযথ বিনিয়োগ। বিশ্বব্যাংক-এর ২০২০-২১ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সার্বিক বেকারত্বের হার ৩.১ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর ৮.৯ শতাংশ বেকার। অপরদিকে ২৭.১% পড়াশোনাতেও নেই এবং প্রশিক্ষণেও নেই, যার সংখ্যা প্রায় ১২.৬ মিলিয়ন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ৮৯.৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১১.৪ মিলিয়নই নারি। এই বিশাল শূন্যতা বিশ্ববাজারে এ দেশের যুবদের, বিশেষ করে যুব নারীদের, প্রবেশে বাধা তৈরি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এই শিক্ষা খাতের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০-এ কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ যুবকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. আলী আকবর খান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা জানান, পরিচিতির অভাবে আমাদের যুবরা বিদেশে দক্ষ কর্মী হিসেবে চাকরি পায় না। আমরা চাকরি বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেই, কিন্তু যুবারা সেই কাজ করতে পারবে কি না সেটা যাচাই করি না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে পড়ছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, আমাদের নারী-বান্ধব কর্ম পরিবেশ ও তাদের প্রবেশগম্যতা তৈরি করতে হবে । তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতেও জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশের বর্তমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এর সুবিধা ভোগ করতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে প্রয়োজন কৌশলগত পদক্ষেপ।
বিশেষ করে যুব নারীদের বিশ্ব বাজারের জন্য দক্ষ করে গড়ে তুলার লক্ষে এই শিক্ষাকে আরও পরিচিত করা জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যুবদের অবগত করতে হবে, যাতে করে সম্ভাবনাময় যুবরা এই শিক্ষাকেও একটি বিকল্প পথ হিসেবে চিন্তা করতে পারে। আর এক্ষেত্রে সরকারের সাথে একত্রে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসমূহকে।