বগুড়ায় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার অভিযোগে সেই আলোচিত বিচারক অতিরিক্ত জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিষ্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বগুড়ার এক নারী বিচারক স্কুলে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করেন। এই নিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে রাতে বিদ্যালয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের বৈঠকে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন এই ঘটনার বিচার হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিদ্যালয়ে আসার পরে সে ডিসির মেয়ে হোক, কিংবা যারই মেয়ে হোক সবাই শিক্ষার্থী। তাদের বিদ্যালয়ের সব রুলস মেনে চলতে হবে।’ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে হাইকোট ও আইন মন্ত্রণালয় অবগত হয়েছেন। অভিযুক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিনকে পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেদিন যা ঘটেছিল
বগুড়া সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে বগুড়ার জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। গত সোমবার ওই কর্মকর্তার মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার। ওই রাতেই কর্মকর্তার মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। এই সময় সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা সরকারি...। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো .... হতে।’
বিচারকের মেয়ের পোস্টের পাল্টা জবাব দেয় ৪ জন সহপাঠী। এই ঘটনায় ওই নারী বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। ওই সময় সেই কর্মকর্তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হুমকি দিয়ে জেল দেওয়ার কথা বলেন। এই সময় দুই অভিভাবককে ওই কর্মকর্তার পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া হয়।
বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রথমে বগুড়া শহরের সার্কিট হাউসের সামনে নওয়াববাড়ি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ১৫ মিনিট পর পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর তারা বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তোলে।
একপর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন। দুই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে শিক্ষার্থীরা দাবি তোলে, ওই বিচারককে বিদ্যালয়ে এসে ভুক্তভোগী অভিভাবকের কাছে মাফ চাইতে হবে। এরপর শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটায় স্কুলের সামনে অবরোধ তৈরি করলে সেখানে বগুড়ার জেলা প্রশাসক আসেন। জেলা প্রশাসক রাত নয়টা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বেঠক করেন। তিনি ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কথা শোনেন। বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যান।