শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

এ হাওয়া বয়ে যাক বিশ্বকাপের দিকে

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ২২:২৫

আয়ারল্যান্ডের কথা বলবেন তো! বলতেই পারেন। ইউরোপিয়ান দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। অযৌক্তিক কথা নয়! ভারতকে যখন ঘরের মাটিতে হারিয়ে দেওয়া গেছে, সেখানে আইরিশরা চুনোপুঁটি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ‘পচা শামুকে পা কাটার’ উদাহরণ অনেক আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সেদিক থেকে দেখলে তুলানামূলক সহজ প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা বরং বেশি চাপের। জিতলে খুব একটা প্রশংসা পাওয়া যায় না, কিন্তু হারলেই সর্বনাশ!

বাংলাদেশ ভুল করেনি। পা কাটেনি পচা শামুকে। বরং দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়ে সিলেট স্টেডিয়ামে যে ক্রিকেটের প্রদর্শনী হলো, তাতে যোগ হলো নতুন এক অধ্যায়। ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে এ এক অন্য বাংলাদেশের ছবি। টি-টোয়েন্টির তাওহিদ হৃদয় ওয়ানডেতে নতুন স্বপ্নের বাহক। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলেও তার ব্যাট এখনো ধারালো। ওয়ানডেও কার্যকর হয়ে উঠলেন হাসান মাহমুদ। এর সঙ্গে যোগ করুন রেকর্ড গড়া সব জয়। প্রাপ্তির খাতায় সংযোজন একের পর এক অর্জন।

আয়ারল্যান্ড সিরিজের তিন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের স্কোরের দিকে তাকানো যাক। প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩৮। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৪৯। আর শেষ ওয়ানডেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০২, তাও মাত্র ১৩.১ ওভারে। বাংলাদেশ আগে ব্যাট করলে স্কোর কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো, একবার ভাবুন। বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড তো আর এমনি বলেননি, সিলেটের উইকেটে ৪০০ রানও সম্ভব!

তা হয়তো হয়নি। তবে ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর ঠিকই গড়েছে তামিম ইকবালরা। ৩৩৪ রানের রেকর্ড টিকেছে মোটে একদিন। পরের ম্যাচেই মুশফিকের ঝড়ে রেকর্ড ৩৪৯ রান। দুটো ম্যাচেই আবার লেখা হয়ে গেছে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। ১৮৩ রানের পর ১০ উইকেটের জয়- বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আপাতত লেখা সোনার অক্ষরে!

এত এত প্রাপ্তির মাঝেও রান বৃষ্টির এই সিরিজে আফসোস হয়ে থাকলো দ্বিতীয় ওয়ানডে। বৃষ্টি বাগড়া না দিলে হয়তো হোয়াইটওয়াশের আনন্দও সঙ্গী হতো বাংলাদেশের। যদিও প্রকৃতির ওপর তো আর কারো হাত নেই, তাই এই আলোচনায় না যাওয়াই উত্তম। দারুণ সব স্মৃতি সঙ্গী করে সময় এখন শুধুই উপভোগের।

এই তো দিনকয়েক আগেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাওয়াশ করলো। ফরম্যাট পাল্টে গেলেও লাল-সবুজ জার্সিধারীদের সাফল্যের গাড়ি থামেনি। ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ আরও ভয়ঙ্কর। সিরিজ শুরুর আগে আইরিশরা চোখে চোখ রেখে কথা বললেও শেষটা হয়েছে তাঁদের মাথা নিচু করে। বিশেষ করে, শেষ ম্যাচে সফরকারীদের ১০১ রানে অল আউট করে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে বাংলাদেশ।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বরাবরই শক্তিশালী। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে এই ফরম্যাটে সাফল্যের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। যদিও মাঝে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছন্দপতন ঘটেছিল। তবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর আবার স্বরূপে তামিম ইকবালরা। ইংলিশরা হতাশ করলেও আলো ছড়াচ্ছে ভারত ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দুটি।

২০২৩, ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতাটির আয়োজক এবার ভারত। প্রতিবেশী দেশের কন্ডিশন ও উইকেট কাছাকাছি হওয়ায় ভালো সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। সিনিয়র চার ক্রিকেটার- তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে লম্বা সময় জাতীয় দলের সঙ্গে আছেন লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ওদিকে নাজমুল হোসেন শান্তও খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটাতে শুরু করেছেন তৌহিদ হৃদয়। সব মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্য একটা দল।

সেটিরই প্রমাণ যেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। সফরকারীদের দুমড়ে মুচড়ে নতুন করে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন সাফল্যের হাওয়া। কয়েক মাস পরই তো বিশ্বকাপ। যাক না এ হাওয়া বিশ্বকাপের দিকে!

ইত্তেফাক/জেডএইচ