সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

টিকটক সিইও বনাম মার্কিন কংগ্রেস

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৫

টিকটকের প্রধান নির্বাহী শো জি চিউ সঙ্গে মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হন। সেখানে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে আইনসভার সদস্যরা তাকে প্রশ্ন করেন। খবর বিবিসি। 

মার্কিন সেনেটাররা এখন এমন একটি বিল এনেছেন, যেটি পাস হলে মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে টিকটকসহ যেকোন বিদেশি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, এমনকি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা চলে যাবে।

এর আগেও কংগ্রেসের সামনে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের হাজির হতে হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।

তবে টিকটকের ক্ষেত্রে শুনানিতে যেভাবে একের পর এক আক্রমণাত্মক সব প্রশ্ন ধেয়ে এসেছে সেটা আলাদা করে নজর কেড়েছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান কেউই এক্ষেত্রে ছাড় দেয়নি টিকটককে।

অ্যাপটির এক মুখপাত্র শুনানি শেষে বলেন রাজনীতিবিদরা আসলে লোক দেখানোর জন্য এমনটি করেছে।

শুনানিতে সাড়ে ৪ ঘন্টার একঘেয়ে প্রশ্নত্তর পর্ব থেকে আমরা অবশ্য দু’একটি নতুন জিনিসও জানতে পেরেছি।

চিউয়ের সন্তানরা টিকটক ব্যবহার করে না

শুনানির এক পর্যায়ে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলের এক নারী সদস্য ন্যানেট ব্যারাগান চিউকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তার সন্তান টিকটক ব্যবহার করে কি-না।

চিউয়ের উত্তর না, তারা করে না কারণ তারা সিঙ্গাপুরে থাকে। আর ওই দেশে ১৩ বছরের নিচে শিশুদের উপযোগি টিকটক ভার্শন নেই।

এরপর তিনি পরিষ্কার করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অ্যাপের এই ভার্শনটি আছে এবং তার সন্তানেরা যদি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতো তাহলে তিনি সেটা তাদের ব্যবহার করতে দিতেন।

চীনে বাইটড্যান্সের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু তথ্যে প্রবেশাধিকার আছে

শুনানিতে চিউ বারবার ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’-এর কথা উল্লেখ করেন। যার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্রেই জমা রাখা হয়। আর এই প্রজেক্টের দেখাশোনার দায়িত্বে অ্যামেরিকান কোম্পানি ওরাকল।

কিন্তু এই প্রজেক্ট টেক্সাস এখনো পুরোপুরিভাবে কাজ করছে না। তাই এখন পর্যন্ত চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলীদের কাছে তথ্যে প্রবেশাধিকার আছে বলে নিশ্চিত করেন  চিউ।

“আমরা বৈশ্বিক আন্ত:কার্যক্ষমতার উপর নির্ভরশীল, চীনের প্রকৌশলীদের তাই তথ্যে প্রবেশাধিকার রযেছে।”—বলেন তিনি।

এই স্বীকারোক্তির বিষয়টা নিয়েই বারবার প্রশ্ন তুলতে থাকতে রাজনীতিবিদরা। তাদের যুক্তি হল যদি চীনের প্রকৌশলীরা তথ্য পেয়ে থাকে তাহলে সেখান থেকে চীনের সরকারের তথ্য না পাবার কারণ নেই।

বাইটড্যান্স হল টিকটক অ্যাপটির নির্মাতা একটি চাইনিজ প্রযুক্তি কোম্পানি।

বাইটড্যান্সে চিউয়ের মালিকানা আছে

শুনানিতে চিউয়ের নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে যে জায়গাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পায়, সেটা সম্ভবত বাইটড্যান্সের সঙ্গে টিকটকের দূরত্ব প্রমাণে।

যে কোন ভাবেই বলা হোক না কেন চাইনিজ কোম্পানিটিই টিকটকের মালিক। চিউ নিজেও একসময় বাইটড্যান্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ছিলেন।

যখন শুরুতে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন চিউ বলতে চাননি যে তিনি বাইটড্যান্সের মালিকানার অংশীদার ছিলেন কি-না।

কিন্তু আইনপ্রনেতাদের চাপে একসময় তিনি বলেন যে হ্যাঁ তিনি ছিলেন। কিন্তু একইসঙ্গে এই যোগাযোগকে তিনি ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ব্যাপারটা কী?

চিউ সাধারণত কংগ্রসের দিকে কোন পাল্টা আক্রমণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।

কিন্তু কিছু দুর্লভ মূহুর্তে তিনি সেটা ভালোভাবেই করতে সফল হন।

ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে টিকটক কী করে এমন প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে তিনি বলেন, “সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি আমেরিকান কোম্পানিগুলোরও কিন্তু ডেটা সংরক্ষণের খুব ভালো রেকর্ড নেই....শুধুমাত্র ফেসবুক আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই দেখুন।”

তার এই মন্তব্যের পেছনে অবশ্য যুক্তি আছে।

ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য একটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ও আরেকটি থার্ড পার্টি অ্যাপ নিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ২০১৮ সালে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল।

আইনপ্রণেতারা টিকটকের বিরুদ্ধে একজোট

শুরু থেকেই টিকটকের বিরুদ্ধে দু’দল এক হয়ে সমালোচনা করতে থাকে, একইসঙ্গে যে রকম সন্দেহ আর অবিশ্বাস দেখা যায় সব পক্ষ থেকে সেটা ছিল খুবই মারাত্মক।

“কংগ্রেস ইতিহাসের সবচেয়ে দ্বিদলীয় কমিটিতে স্বাগত,” বলেন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার।

“চিউ, আপনাকে ধন্যবাদ, রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের এক কাতারে নিয়ে আসার জন্য,” বলেন আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ড্যান ক্রেনশ। এটা দেখাটা সত্যিই বিশেষ কিছু ছিল যে সমস্ত রাজনীতিবিদরা যারা প্রায় কোনকিছুতেই এক হন না, সেই তারাই টিকটক যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এ ব্যাপারে একেবারে নির্বিশেষে একমত।

শুনানি শেষে টিকটক অভিযোগ করে যে তাদের অ্যাপ তথ্য সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে ব্যাপারে খুবই কম নজর দেওয়া হয়েছে।

“একইসঙ্গে আজ কমিটির সদস্যরা কেউই কিন্তু বলেননি টিকটকে যে ৫০ লাখ ব্যবসা আছে তাদের কী হবে অথবা যে ১৫ কোটি আমেরিকান যারা টিকটক পছন্দ করে সেরকম একটা প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা) কীভাবে প্রয়োগ করা হবে।”

টিকটক ওয়াশিংটনে লবিংয়ের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তাদের আরও প্রচুর ডলার এ ব্যাপারে খরচ করতে হবে।

 

 

ইত্তেফাক/এফএস