মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘আমার বাবার আত্মস্বীকৃত খুনিকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছিল জিয়া’

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৯:২১

'আমার বাবার আত্মস্বীকৃত খুনি ইনকিলাব পত্রিকার মাওলানা মান্নান। তাকে জিয়াউর রহমান প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। আর এরশাদের আমলে সে হয় মন্ত্রী।-বেশ আবেগতাড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী। বাংলাদেশে পাকিস্তানে বর্বরোচিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত ওয়ান বাংলাদেশের সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা এই গণহত্যার একটি জাতীয় স্বীকৃতি চেয়েছিলাম। সেটাই তো মেলেনি। ১৯৭৫ থেকে ‘৯৬ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা তো খুনিদের অংশ ছিলেন। তারা তো জাতির পিতাকে খুন করেছে। তারাই তো রাজাকার আলবদরদের নিয়ে সরকার গঠন করেছে। খালেদা জিয়াও বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল হোতা নিজামী ও মুজাহিদকে বেছে বেছে মন্ত্রী করল। সুতরাং জাতীয় স্বীকৃতি আপনি পাবেন কোথায়? তাই তো ফিরে ফিরে আসি,কথাগুলো আপনাদের বলি।

তিনি বলেন, শিক্ষকরা যেন যৌক্তিকভাবে আপনাদের শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে পারেন। আর শিক্ষার্থীদের কাছে আসি, কারণ এই দেশ আপনার মা। আপনার মার ক্ষতি করলো যারা, তাদের কথা জানাতে শহীদ সন্তানেরা, আমরা ফিরে ফিরে আসি। ফিরে আসি, কারণ তারা ইচ্ছে করে আমাদের এত গর্বের স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধোঁয়াশা করে দিয়েছে। নাগরিকতা ও জাতীয়তাবাদের মধ্যে এক ধরনের বিভেদ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আমি কী বাঙালি, নাকি আমি বাংলাদেশি, আমি কী আগে মুসলমান, আমি কে? একটি বড় রাজনৈতিক দল যখন একটি দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মেলায়, সেটা সুবিধাজনক নয়, সুখকরও নয়।

একদিন সত্যের জয় হবে এবং বাংলাদেশ এই গণহত্যার ন্যায্য স্বীকৃতি অর্জন করবে জানিয়ে নুজহাত চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে-মেয়ে যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদের ছেলে-মেয়ে, আপনাদের পরবর্তী প্রজন্ম এভাবেই আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। যেন আপনার ছেলেকে আবার সেই বধ্যভূমিতে পরে থাকতে না হয়। বিশ্বের কোনো মাকে যেন তার ছেলেকে বধ্যভূমিতে পড়ে আছে এমনটা দেখতে না হয় আমার দাদির মত।

এই পথে হাঁটতে গিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। ডা. নুজহাত বলেন, কান টানলে মাথা আসে। আপনি ইয়াহিয়াকে টানলে হেনরি কিসিঞ্জারের নাম আসবে, নিক্সন আসবে। বাংলাদেশ একটি অসাধ্য সাধন করেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। কে আমাদের সঙ্গে ছিল? পাশ্চাত্য দেশগুলো ছিল না, যুক্তরাষ্ট্রের মত শক্তিশালী দেশটিও আমাদের পক্ষে ছিল না, ইসলামি দেশগুলোও আমাদের সঙ্গে ছিল না, চীনও ছিল না। সুতরাং সেই প্রেক্ষাপট থেকে চিন্তা করলে বুঝতে হবে, আমাদের পথও সহজ হবে না। আজও পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকা, চীন রয়েছে। তারা কী তাদের ভুল স্বীকার করেছে? করেনি। সুতরাং এ যাত্রা সহজ হবে না। তবে একদিন আমরা স্বীকৃতি পাবোই। আমি না দেখে যেতে পারি, আমার পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত দেখবে। এত বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা, তারা মানবাধিকারের এত এত কথা বলে। কথায় কথায় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জামায়াত ইসলামের মানবাধিকারের কথা বলে। বাংলাদেশের ইসলামিক দল, তারা মানবাধিকার পাচ্ছে না বলে। এগুলো তো আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলা! এটা তো আদালতের রায়। তারা এই যুদ্ধাপরাধীদের মানবাধিকার দেখে। কিন্তু এতগুলো বছর ধরে আমরা যে কাঁদছি, আমেরিকা কখনো আমাদের মানবাধিকার দেখলো না। 

ওয়ান বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মো. রশিদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও ওয়ান বাংলাদেশের হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি নবনীতা চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ওয়ান বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম, রাবি উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম টিপু এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর।

ইত্তেফাক/এএএম