চিকিৎসায় ভালো হওয়া এবং প্রতিরোধযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মায় প্রতিবছর অনেক মানুষ অসুস্থ হয় ও মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতিবছর ২৪ মার্চ যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়। ১৮৮২ সালে এইদিনে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কৃত হয়েছিল। পরবর্তীতে চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। আজ ২০২৩-এ এসেও আমরা যক্ষ্মার তাৎপর্য নিয়ে কথা বলছি। এই রোগটি এখনো বিশ্বব্যাপী ১০.৬ মিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করে এবং ১.৬ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ।
বাংলাদেশে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে প্রতিবছর প্রায় তিন লাখের মত রোগী নির্ণীত হয় ও চিকিৎসা পেয়ে থাকে। এই বিশাল সংখ্যক রোগীর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী হয়তো চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যায়। বর্তমানে যক্ষ্মারোগের চিকিৎসার জন্য অনেক ভালো মানের ওষুধ রয়েছে যা সরকারি ও সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। যক্ষ্মা নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়ে থাকে।
ঔষধের পাশাপাশি রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতেও হয়েছে অনেক আধুনিকায়ন। বর্তমানে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের জন্য আধুনিক পরীক্ষা (জিন এক্সপার্ট) এর দেশব্যাপী সম্প্রসারণ ঘটেছে। ঔষধ প্রতিরোধী এর জন্য উন্নত চিকিৎসা এখন দেশেই পাওয়া যাচ্ছে।
যক্ষ্মারোগ প্রতিরোধে বিসিজি টিকা শিশুদের প্রতিরক্ষা দিয়ে থাকে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতিরক্ষার জন্য একধরনের ঔষধের ব্যবস্থা রয়েছে (Preventive Medicine)।
এতসব সফল উদ্যোগের পরেও আমরা দেখছি যক্ষ্মা জয়ের পথটি খুবই দীর্ঘ। এটা অনেকটা রোগের ধরনের কারণে, আরেকটা কারণ হলো এটা শুধুমাত্র একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়। এর সঙ্গে জড়িত আছে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আরও অনেকগুলো বিষয়। রোগের বিরুদ্ধে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এর জন্যে সর্বস্তরের জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি।
কোভিড-১৯ রোগটি আমাদের দেখিয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার Resilience টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্বব্যাপী যে গতিতে কোভিডের জন্য গবেষণা, অর্থ বরাদ্দ, ভ্যাক্সিন ও অন্যান্য আবিষ্কার অনেক দ্রুততার সঙ্গে ঘটেছে। যদিও দুটো রোগের সরাসরি তুলনা করা যায় না। তারপরেও যক্ষ্মার এ পথ পরিক্রমা বিশ্বব্যাপী অনেক সুদীর্ঘ। দরিদ্র শ্রেণিদের রোগ হিসেবে একসময় পরিচিত থাকায় হয়তো যক্ষ্মা অনেকদিন অবহেলিত ছিল। চিকিৎসা রোগ নির্ণয় পদ্ধতি আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে এই সেবা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে দরকার অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের উদ্যোগ ও সম্পৃকতাতা যা যক্ষ্মা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে যক্ষ্মা নির্মূলের এ দীর্ঘ যাত্রা আমরা সফল করতে পারবো।
ডা. মাহফুজা রিফাত (জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মা নির্মূলে গবেষণার পথিকৃৎ)