চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভার ব্যানারে ‘জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান লেখা না থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা।
রোববার (২৬ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদ হল রুমে এ ঘটনা ঘটে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা পরিষদের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ করে ইউএনও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ হল রুমে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব প্রধান অতিথি ও ইউএনও সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দীন হাসান চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনজুমান আরা বেগম, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী ও থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্য শেষে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি প্রদান পর্ব। এর অংশ হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং অন্যান্য অতিথিরা ইফতার সামগ্রীসহ একটি প্যাকেট মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করছেন। এ সময় হল রুমে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ডালু ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকায় প্রতিবাদ করেন। পরে একইভাবে সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সদ্য সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজিও একই কথার রেশ টেনে প্রতিবাদ শুরু করেন। এতে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও সমস্বরে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু মুক্তিযোদ্ধা উপহার সামগ্রী নিতে চাইলে তাদের টেনে-হিঁচড়ে হল রুমের ডায়াস থেকে নামিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে হাতাহাতি ও তুমুল হট্টগোল শুরু হয়।
পরে উপস্থিত থানার ওসি ইয়াসির আরাফাতসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা তাদের নিবৃত্ত করেন। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান হট্টগোল নিবৃত্ত করার চেষ্ঠা করেন। পরে তিনি সভাস্থল ছেড়ে যান। পরে ইউএনও পরিস্থিতি শান্ত হলে আনসার বেস্টনীর মধ্য দিয়ে সরকারি গাড়িতে করে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এর মধ্যে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া উপহার সামগ্রী হাতে নিয়ে হল রুম থেকে বের হলে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চরম হেনস্তা করেন। পরে প্যাকেট খুললে দেখা যায়, সেখানে ৭-৮ পদের ইফতার সামগ্রী রয়েছে। সামগ্রীগুলোর ওজন পাঁচ কেজি হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা হল রুম থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আবু তাহের এলএমজি। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা মিলন কুমার ভট্টাচার্য্য ও মুক্তিযোদ্ধা অরুন মজুমদারসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
আবু তাহের এলএমজি বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু না লিখে ইউএনও যে বিএনপি-জামায়াতের চেতনাকে ধারন করেন সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাড়া ব্যানার ছাপিয়ে স্বাধীনতার দিবসের অনুষ্ঠান করা চরম দৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর বিহিত করতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ দলীয় হাই কমান্ডের হস্তক্ষেপ চাই। বক্তব্যে আবু তাহের আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান স্বরূপ প্রতি বছর যাতায়াত ভাড়া বাবদ কিছু সম্মানী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হতো। অথচ এ বছর তা না দিয়ে রিলিফের সামগ্রী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তার ফান্ড নাই বলে আমাদের জানান। অথচ এ অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে তিনি লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন।
সাতকানিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত বলেন, আমার চোখের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হলে আমি ও পুলিশ সদস্যরা মিলে তাদের নিবৃত্ত করি। ফলে বড় কোনো ঘটনা হয়নি।
ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখার সরকারি পর্যায়ে বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যানারটি আমন্ত্রণ কার্ডে যে ষ্টাইল রয়েছে সেভাবেই লেখা হয়েছে। তবে বক্তব্যের সময় জয় বাংলা বলা বাধ্যতামূলক। হট্টগোলের বিষয়ে ইউএনও বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এতে আবু তাহের সাহেবের লোকেরা সম্মানী নেওয়াদের ওপর চড়াও হয়ে উপহার নিতে বাধা দেয়। লাখ লাখ চাঁদা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ইউএনও বলেন, এ রকম কোনো প্রুভ দেখাতে পারলে আমার ব্যাখ্যা দিতে কোনো সমস্যা নেই।
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনওকে জিজ্ঞাসা করেছি। ব্যানারে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু লেখার বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানিয়েছেন। এছাড়া হট্টগোল থামার পর আমি সভাস্থল ছেড়ে অন্য কাজে চলে যায়।