সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ট্রাম্প গ্রেফতার হবেন?

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৭:০৪

গত সপ্তাহে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও তিনি পর্নো তারকাকে অর্থ দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত পর্যন্ত হননি। যদিও আশঙ্কার পর তিন দিনে তিনি ১৫ লাখ ডলার তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ট্রাম্প আদৌ অভিযুক্ত হবেন কি না এবং অভিযুক্ত হলে গ্রেফতার এবং জেলে যাবেন কি না তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পের পক্ষে যেভাবে নেমেছে তাতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে গ্রেফতার করাটা দুরুহ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গ্রেফতার হওয়ার আগেই ট্রাম্পের হুমকিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। শীর্ষ ডেমোক্র্যাটরা আশঙ্কা করে বলেছেন, ট্রাম্পের এই বেপরোয়া আচরণ হয়তো কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। ট্রাম্প অভিযুক্ত হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টের ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা।

  • গ্রেফতার নিয়ে সংশয়

ট্রাম্প তার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোর বাসভবনে আছেন। কিন্তু এরই মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা এবং তাকে গ্রেফতারের নানা ভুয়া ছবি প্রকাশ পেয়েছে। ট্রাম্প নিজেও একটি ছবি তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া সোশ্যাল ট্রুথে প্রকাশ করেছেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প তার আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েল নামের এক নারীর মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দিয়েছিলে, যার সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। যদিও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখনো এমন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প কবে অভিযুক্ত হবেন তা নিয়ে সংশয় আছে। ম্যানহাটন আদালতে ফৌজদারি মামলার বিচারে এক বছর বা তার বেশি সময়ও লাগে। ফলে ট্রাম্পের বিচার হয়তো ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে, এমনকি পরেও না হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প অভিযুক্ত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না এমন কোনো বিধিনিষেধ মার্কিন সংবিধানে নেই। তবে নিজের জন্য ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প বিধিনিষেধের মুখে পড়তে পারেন। ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ব্র্যাগকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার পর আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হতে পারে। তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করলে বিচারক অথবা ফ্লোরিডার গভর্নর তাকে প্রত্যর্পণ করতে পারেন। ফ্লোরিডার বর্তমান গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি হয়তো ট্রাম্পকে প্রত্যপর্ণ থেকে বিলম্ব ঘটাতে পারেন। তবে অভিযুক্ত হওয়াটা থামাতে পারবেন না। ট্রাম্প অভিযুক্ত হলে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট আদালতে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং মুখের ছবি দিতে হবে। তাকে হেফাজতে নেওয়ার আগে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনাও দিতে হবে। এরই মধ্যে ট্রাম্পকে অনলাইনে আদালতে হাজির করতে তার আইনজীবীরা সমঝোতার চেষ্টা করছেন। ট্রাম্পকে গ্রেফতার করা হলে ঐতিহ্যগতভাবে পার্প ওয়াক করবেন না। আবার তার হুমকির বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। কারণ ইতিমধ্যে তিনি এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আবার ফোর্বস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, ট্রাম্প অভিযুক্ত হলেও জেলে যাবেন না। কারণ নিউ ইয়র্কের বর্তমান জামিনের রীতি অনুযায়ী অপকর্ম বিশেষ করে অসহিংস মামলার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে নিজস্ব জিম্মায় মুক্তি দেওয়া যাবে, যদি না তার পালানোর ঝুঁকি থাকে।

  • ট্রাম্পের পাশে সেই রিপাবলিকানরাই

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় রিপাবলিকান পার্টিরই অনেকে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকানরা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তাদেরকে দিতে ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে চিঠি দিয়েছেন। তারা তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার হুমকি দিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি তো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। ক্যাপিটল হিলে হামলায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে থাকেন ট্রাম্পের সাবেক রানিংমেট মাইক পেন্স। তিনিও বলেছেন, আমেরিকানরা ট্রাম্পকে অভিযুক্ত দেখতে চান না। ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের গভর্নর ক্রিস সুনুনুর দাবি, ট্রাম্প অন্যায় বিচারের শিকার হয়েছেন। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিস্যান্টিস। তিনি ব্র্যাগের কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ব্র্যাগ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন এবং তার সরকারি অফিসকে এক্ষেত্রে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সিএনএনের বিশ্লেষক রোনাল্ড ব্রাউনস্টেইনের মতে, রিপাবলিকান পার্টি যেভাবে ট্রাম্পের পক্ষে ম্যানহাটন আদালতকে আক্রমণ করছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে ট্রাম্পকে ছাড়ছে না দলটি। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৪ শতাংশ জিওপি ভোটার মনে করেন যে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি জিততে পারে। সেক্ষেত্রে দলটিকে ট্রাম্পকে বাদ দিয়ে প্রার্থী দিতে হবে। — সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান ও ফোর্বস

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন