শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চোখই জানাবে আলঝেইমারের লক্ষণ    

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:০০

আলজেইমার (মস্তিস্কের এক ধরনের রোগ যার ফলে কিছু মনে রাখতে না পারে না রোগী) অনেক সময় কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুরুর দিকে অনেক সময়ই তা ধরা পড়ে না। কারণ এই রোগের লক্ষণ অন্যান্য অসুস্থতার ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে। আলজেইমার হলো ডিমেনশিয়ার একটি রূপ। আলজেইমারের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে সঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়া, একই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞেস করা কিংবা একই কথা বহুবার বলা। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কোথায় রাখা হয়েছে তা ভুলে যাওয়া, পরিচিতদের নাম ভুলে যাওয়া এবং পরিচিত স্থান চিনতে না পারাসহ প্রভৃতি। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এসব লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই চোখ দেখেই বলা যাবে কেউ আলঝেইমারে আক্রান্ত কি না।

  • চোখ জানে

চোখ আত্মার জানালার চেয়েও বেশি কিছু। চোখই একজন মানুষের জ্ঞানের স্বাস্থ্যের অবস্থা বলে দিতে পারে। ফ্লোরিডার বোকা রাটনে ইনস্টিটিউট ফর নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজেসের চিকিৎসা শিক্ষার পরিচালক চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিস্টিন গ্রিয়ারের মতে, চোখ হলো মস্তিষ্কের জানালা। তিনি বলেন, চোখের পেছনে অপটিক নার্ভ এবং রেটিনার দিকে তাকিয়ে স্নায়ুতন্ত্র ব্যবস্থা সরাসরি দেখা যায়। উপসর্গ শুরু হওয়ার আগে আলজেইমার রোগ নির্ণয়ে চোখ কীভাবে সাহায্য করতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। এর উপসর্গ শুরু হওয়ার আগেই চোখ দেখে আলজেইমার রোগী শনাক্ত করা সম্ভব বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আগে লক্ষণ বুঝতে পারলে স্মৃতিশক্তি এবং আচরণ প্রভাবিত হওয়ার আগেই রোগটি থেকে মুক্ত থাকার সুযোগ তৈরি হয়।

আলজেইমার প্রতিরোধ বিষয়ক নিউরোলজিস্ট এবং নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজেস ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. রিচার্ড আইজ্যাকসন বলেছেন, আলজেইমার রোগটি স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রথম লক্ষণগুলোর কয়েক দশক আগে মস্তিষ্কে শুরু হয়। তিনি জানান, চিকিৎসকরা রোগটিকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।

কত তাড়াতাড়ি আমাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের লক্ষণ দেখতে পারি তা জানতে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় ৮৬ জন মানুষের রেটিনা এবং মস্তিষ্ক থেকে দান করা টিস্যু পরীক্ষা করা হয়েছে যাদের মানসিক অবনতির বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাইয়ের নিউরোসার্জারি এবং বায়োমেডিকাল বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও সিনিয়র লেখক মায়া কোরোনিও-হামাউই এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গবেষণায় প্রথমে প্রোটিন প্রোফাইল এবং মানুষের রেটিনায় আলজেইমার রোগের আণবিক, সেলুলার এবং কাঠামোগত প্রভাব এবং কীভাবে তারা মস্তিষ্ক এবং জ্ঞানের কার্যক্রমের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। কোরোনিও-হামাউই বলেন, রেটিনার পরিবর্তনগুলো মস্তিষ্কের কিছু অংশের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যাকে বলা হয় এন্টোরহিনাল এবং টেম্পোরাল কর্টিসিস যা স্মৃতি এবং সময়ের উপলব্ধির কেন্দ্রস্থল।

আলজেইমার রোগ এবং স্মৃতির ক্ষেত্রে হালকা সমস্যা আছে এমন ৮৬ জন দাতাদের কাছ থেকে ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে রেটিনাল এবং মস্তিষ্কের টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা। লেখকদের মতে, রেটিনাল নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় গ্রুপ। এরপর স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি আছে তাদের সঙ্গে এসব নমুনা পরীক্ষা করে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

অ্যাক্টা নিউরোপ্যাথোলজিকা জার্নালে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এই সমীক্ষায় আলজেইমার রোগের প্রধান নির্দেশক বিটা-অ্যামাইলয়েড বৃদ্ধি পেয়েছে। আলঝেইমার এবং প্রাথমিক জ্ঞান হ্রাস পেয়েছে এমন উভয় প্রকৃতির মানুষের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্মৃতিভ্রমের সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে মাইক্রোগিয়াল কোষ ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই কোষগুলো মস্তিষ্ক এবং রেটিনা থেকে বিটা-অ্যামাইলয়েড পরিষ্কার করাসহ অন্যান্য কোষগুলো মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। এছাড়াও প্রদাহের চিহ্নিতকারীকেও পাওয়া গেছে, যা রোগের অগ্রগতির জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইজ্যাকসন। এই তথ্য যাদের স্মৃতিশক্তি স্বাভাবিক বা যাদের ন্যূনতম সমস্যা নেই—এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও স্পষ্ট ছিল। ফলে এটা বোঝা যায় যে, চোখের পরীক্ষাগুলো প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করার জন্য ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। গবেষকরা অ্যামাইলয়েড বিটা এবং অন্যান্য কোষের চারপাশে অসংখ্য ইমিউন কোষ খুঁজে পেয়েছেন। এগুলোই প্রদাহ, কোষ এবং টিস্যু মৃত্যুর জন্য দায়ী।

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন