মেয়ের স্কুলে যুদ্ধবিরোধী ছবি আঁকার দায়ে রাশিয়ার সাজাপ্রাপ্ত বাবা আলেক্সি মোস্কালেভকে বেলারুশে পলাতক অবস্থায় আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাশিয়ার একটি আদালত মোস্কালেভকে তার অনুপস্থিতিতে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। রুশ সেনাবাহিনীকে অপমান করার দায়ে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে গৃহবন্দী থেকে পালিয়ে যান মোস্কালেভ। এরপর বেলারুশের রাজধানী মিনস্কের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হঠাৎ করে তাকে আটক করা হয়। মোস্কালেভ ও তার মেয়েকে নিয়ে গত বছর থেকেই তোলপাড় শুরু হয়।
স্কুল কর্তৃপক্ষ গত বছর মোস্কালেভের ১২ বছর বয়সী মেয়ের আঁকা একটি ছবি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। মস্কো থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইয়েফ্রেমভে শহরে মোস্কালেভ তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। গত বছরের এপ্রিলে তার মেয়ে মাশা মোস্কালেভ স্কুলে একটি ছবি এঁকে তার জীবনে সমস্যা শুরু করে।
ওই ছবিতে শিশুটি ইউক্রেনের পতাকা এঁকেছিল। রুশ ভাষায় পতাকার ভিতরে লেখা 'গ্লোরি টু ইউক্রেন', দুটি রকেট পতাকার দিকে আসছে এবং এক নারী তার মেয়ের হাত ধরে আরেক হাত দিয়ে রকেটটি আটকানোর চেষ্টা করছেন। রকেটের নীচে একটি রাশিয়ান পতাকা রয়েছে, যার উপরে 'নো ওয়ার' লেখা রয়েছে।
মোস্কালেভ জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ তার মেয়ের ছবি আঁকার বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী পোস্ট দেয়ার জন্য মোস্কালেভকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানা বাড়লেও বিপদ দূর হয়নি মোস্কালেভ পরিবারের প্রধানের কাছ থেকে।
গত বছরের ডিসেম্বরে মোস্কালেভের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কারণ, তিনি ইতোমধ্যে একই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। মামলা শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ মাশাকে তার বাবার কাছ থেকে আলাদা করে একটি শিশু গৃহে রাখে।
গত ১ মার্চের পর থেকে মাশাকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার একটি আদালত যখন মোস্কালেভকে অনুপস্থিতিতে সাজা দেয়, তখন আদালতের প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছিলেন, তিনি (মোস্কালেভ) গৃহবন্দী থেকে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি শেষরক্ষা পাননি।
একজন আইনজীবী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, 'সম্ভবত বেলারুশের মিনস্কে তাকে আটক করা হয়েছে। সেখানে মোবাইল ফোন চালু করলে তার অবস্থান জানা যায়। কেউ ভুল করে তার অবস্থান প্রকাশ করেছে। সম্ভবত মোবাইল ফোন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পেরে তিনি নিজেই এটি করেছিলেন।'
মিনস্কের কাছে মোস্কালেভকে আটকের বিষয়ে রয়টার্সের কাছে জানতে চাইলে তারা নিশ্চিত করেছে, রাশিয়ার অনুরোধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোস্কালেভ কীভাবে বেলারুশে পৌঁছেছেন তা এখনও জানা যায়নি।
তবে যারা রাশিয়া থেকে অবৈধভাবে অন্য দেশে যেতে চান, তাদের বেশিরভাগই বেলারুশ হয়ে যান। মোস্কালেভের সাজায় 'হতবাক' ইয়েফ্রেমভ সিটি কাউন্সিলর ওলগা পোদোদস্কায়া জানান, মতামত প্রকাশের জন্য জেল হলে তা ভয়াবহ। দুই বছর জেলে থাকাটা দুঃস্বপ্নের মতো।