বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

অনিয়ম

ভিকারুননিসা ও আইডিয়ালের দুর্নীতি ঠেকানো যাচ্ছে না

অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০০

রাজধানীর নামি দুটি প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন এবং মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি দীর্ঘদিনের। এ দুই প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি রুখতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সভাপতির দায়িত্ব দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। তা সত্ত্বেও অনিয়ম এবং দুর্নীতি ঠেকানো যায়নি এই দুই প্রতিষ্ঠানে। বরং এখনো নিয়োগসহ নানা অনিয়ম চলছে প্রতিষ্ঠান দুটিতে। অথচ ভিকারুননিসায় চার বছর এবং আইডিয়ালে গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সাত বছর ধরে প্রশাসন ক্যাডারের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ভিকারুননিসার সভাপতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিলুর রহমান এবং আইডিয়ালের সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।

নানা অনিয়মের অভিযোগে চলতি সপ্তাহে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ কামরুন নাহান ও গভর্নিং বডির সদস্য ফারহানা খানমের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এছাড়া নিয়ম ভেঙে কমিটির সদস্যদের জন্য ভর্তি কোটা রাখা এবং শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএর আইন না মানার অভিযোগ উঠেছে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও জমা পড়েছে।

২০১৯ সালে ঢাকার তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে গভর্নিং বডি অনুমোদন দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই নিয়ম অনুযায়ী যিনি বিভাগীয় কমিশনার হবেন তিনি সভাপতি থাকবেন। বর্তমান সভাপতি খলিলুর রহমান বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার নামেই সভাপতি অনুমোদন দেয় বোর্ড। ফলে খলিলুর রহমান যেখানেই থাকুক না কেন, তিনিই সভাপতি হবেন। বর্তমানে খলিলুর রহমান ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব।

অন্যদিকে, ২০১৭ সাল থেকেই  সরকারের এক কর্মকর্তা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হন আবু হেনা মোরশেদ জামান। তিনি ছিলেন সরকারের যুগ্ম-সচিব। তিনি ২০১৭ সালের ৪ মে থেকে ২০১৯ সালের ৪ মে পর্যন্ত, ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন। পরে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সভাপতি হয়েছেন।
                                                                                                               
ভিকারুননিসা নূন স্কুলে খাতা ট্যাম্পারিং করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে ডিসেম্বরে অধ্যক্ষ ফওজিয়াকে সরিয়ে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে।  পরে শিক্ষা ক্যাডারের আরেক কর্মকর্তা অধ্যাপক কামরুন নাহারকে পদায়ন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এক সময় শিক্ষা ক্যাডারের এই সদস্য একজন অভিভাবককে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ঐ অডিওতে নারী কণ্ঠে উত্তেজিত স্বরে অভিভাবক ফোরামের কাউকে উদ্দেশ করে অনবরত গালাগালি করতে শোনা যায়। এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত।’ বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হলেও তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।

কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ৫০/৬০ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করে ৫/৬ কোটি টাকা অর্জন ও অন্যান্য দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ৬২ পাতার অভিযোগপত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এই অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে কামরুন নাহার অবসরে যাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী সিনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম থাকলেও নিয়ম ভেঙে জুনিয়রকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

রাজধানীর মতিঝিলস্থ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, ‘ননএমপিও পদেও এনটিআরসিএর সনদ ছাড়া নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’  কিন্তু আইডিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ম মানছে না। যদিও ১৬ জন নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর আগেও একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। গভর্নিং বডির অনেকে নিজেদের নামে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকেন। কলেজের এক শিক্ষক বলেন, কলেজটির সভাপতি হলেন একজন সচিব। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ বোর্ডের নেই। এ কারণেই ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে।

ঢাকা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, এই দুই পদে এত কী লাভ যে সচিবরাও ঐ পদে থাকার জন্য এত মরিয়া। এছাড়া তারা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বন্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। ফলে এই দুই পদ নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের ভালোর জন্যই তাদের গভর্নিং বডির সভাপতি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, কোনো অধ্যক্ষ অবসরে গেলে পরবর্তী সিনিয়র শিক্ষক দায়িত্ব পাবেন। এর ব্যত্যয় হলে আর অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। ’

ইত্তেফাক/এমএএম