শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

প ঙ্ ক্তি মা লা

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:২৪

বাংলা ভাষার ভেতর অজস্র কবিতা
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

একটি কবিতা মিশে থাকে ধানদুধে, স্তনদুধে।
একটি কবিতা লুকিয়ে থাকে তোমার আগুনের ভাঁজে
তুমি একটি কবিতা লালন করো অন্যের বাগানে
অনুবাদের মতো,
অথবা জলবন্দি অ্যাকুরিয়ামে।
একটি কবিতা উড়ে যায়, দূরে...

আর আমি কবিতার নবুয়তপ্রাপ্তির জন্য
১২ ফুট দীর্ঘ, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি প্রশস্ত পর্বতের ৮৯০ ফুট চূড়োয়
অপেক্ষা করছি চল্লিশ বছর। ঋষি।
এবং কেঁদেছি বাংলা ভাষায়।

কবিতার জন্য হত্যা বা আত্মহত্যাকেও আনন্দ মনে হয়!
একটি কবিতা পেলে
আমি হয়তো চিত্কার করে বলে উঠব—
‘জয় বাংলা’!

বাংলা ভাষার ভেতরও আছে অজস্র কবিতা।


সকালের গান

সোহরাব পাশা

সাদা মৃত্যু
লাল নীল মৃত্যু
ঘুমের ভেতর ডেকে ওঠে মৃত্যু,

নৈঃশব্দ্যেকে তুমুল জাগিয়ে তোলে দাহ
নিরীহ বাতাস পুড়ে যায়,
ওড়ে তীব্র শোকের মৌমাছি
সুচবিদ্ধ চোখ থেকে রক্ত ঝরে, স্বপ্ন—
ভিজে যায় অসহায় মানুষের। সকাল হয় না।
দুপুরবেলায় গোধূলির ছায়া নামে,
দু-একটি গাছে ঝুলে থাকে
শীর্ণ রোদের কঙ্কাল;

নিচে নষ্ট বাঙ্কারে মাথার খুলি, ভাঙা লাল চুড়ি,
ছেঁড়া চোখ, নগ্ন ছিন্নভিন্ন শরীরের স্নিগ্ধ রোদ।
অতঃপর ওই লাল রক্তে লাল সূর্য
শহিদ মিনার
তীব্র জ্বলে ওঠে আগুন শেষ দিগন্তে
দুলে ওঠে সৃজনের বীজতলা-মুগ্ধতা মুখর
থিরথির কাঁপে স্বপ্নঘর—
হেঁটে আসে সকালের গান।


ধলেশ্বরীর মেয়ে
হাসান কল্লোল

ভোরের পাতার ছোঁয়ায় জেগেছিল পাথরের চোখ
ঠিক পাথর নয়,পাথরের মতো কঠিন প্রতিমা!
দুলে উঠল যেন ধলেশ্বরীর মেয়ে
মোহনায় খরস্রোতা শ্যামাঙ্গী তরঙ্গের নাভি!
তুমি কি তবে আধাপ্রৌঢ় কেরানি অবেলায়
গিয়েছিল পিসিদের বাড়ি?
আকাশে মেঘের ঝুলে বয়ে চলে নদী,

তোমার চুলেরা ওড়ে ও কেশবতী যুবতী
তোমার টোল পড়া গালে সাজেক ঢালের সূর্যোদয়
দেখি আনন্দ ভোরে!
দেখি আমি আর গলে গিয়ে হ্রদ হয়ে
মিশে যাই কীর্তনখোলার রাতের রহস্য জলে!

জলের কালিতে লিখি:
এই জীবনে আমি চাই না তোমারে
তুমি পর জনমের লক্ষ বছর আমার সাথে থেক।
পাশে থেক নরম কাঁথার মতো, কাদা জড়ানো শরীর
থেকে মুছে দিয়ো ক্লেদ; কষ্টের রাতগুলোয় ঘুম দিয়ো
অথবা শুনিও তুমি রবিঠাকুরের কিছু প্রিয় গান!
আর প্রাণ চায় তবে চক্ষুও চায় বলো
আমি কোনো সাধু নই
সাধারণ কেরানি ছিলাম নশ্বর পৃথিবীতে!

নতুন অবিনশ্বর জগতে এই আমি কিছু নই আর
শুধু পেতে চাই তোমায় কুড়িয়ে রাখার অনন্ত অধিকার।

আশালতা
দ্বীপ সরকার

আশালতা আঁকতে আঁকতে এঁকে ফেলেছি আকাশ—
তার তিনবাহুই নিজ কক্ষপথের দিকে ধাবিত
এবার পুলসিরাতের দিকে যেতে চাই—অথচ
গন্তব্যের শেষে দেখি আমি আকাশে ঝুলে আছি

কী হবে এখন?
পৃথিবীতে হাঁটতে হাঁটতে মঙ্গলে
মঙ্গলে হাঁটতে হাঁটতে শনি, বৃহস্পতি
মূলত—আমরা গভীর সঙ্কটে আছি
হয়তো ঝুলে
হয়তো ভুলে

লোনা জলের নাক
আসাদুজ্জামান রোকন

সন্ধ্যাপাড়ের বিরান গন্ধ
কেমন আঠালো গন্ধ মাটির, আরো অদ্ভুত
জোয়ারের গন্ধ
জন্মের পিতার গন্ধ! আমি টের পাই;
কেমন ফলন হয় জেলেদের, কুমোরের, কৃষকের—
গন্ধে-ছোঁয়ায়-হাওয়ায়
আমি টের পাই সমুদ্রের লোনা ভেসে আসে
নূহের বন্যার মতো
মাটির পিরান-বদ্ধ পিতাকে ডোবাতে
তার সবটুকু কেড়ে নিতে

 

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন