চৈত্র সংক্রান্তিতে পুরাতন বছরকে বিদায় একই সঙ্গে নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়ে এখন বৈসাবী উৎসবের আমেজ বইছে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের এ উৎসব তিনটি আলাদা নামে হলেও সমতলের মানুষের কাছে বৈসাবী নামে পরিচিত। এ উৎসবকে ঘিরে রাঙ্গামাটিতে পাঁচ দিনব্যাপী বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই মেলা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
৪ এপ্রিল (সোমবার) রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউট প্রাঙ্গনে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু সংস্কৃতি মেলার উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এছাড়া পাহাড়ে সপ্তাহ ব্যাপী চলছে নানা আয়োজন।
পাহাড়ের মানুষের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি তথা বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক পালন করা হচ্ছে এবার সাড়ম্বরে। আলাদা নামে হলেও চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা ও মারমা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ একযোগে এ উৎসব পালন করে।
চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই আর তংচঙ্গ্যারা বিষু নামে এ সামাজিক উৎসব পালন করে। তবে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ এ উৎসবকে বৈসাবি নামেই চেনে। উৎসবকে ঘিরে নানান আয়োজন শুরু হয়েছে পাহাড়ি গ্রামে। সপ্তাহ জুড়ে চলবে এ উৎসব।
রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে পাঁচ দিনের বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু সংস্কৃতি মেলায় ৩০টি স্টলে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর আলোকচিত্র ও ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র ও হস্ত শিল্প সামগ্রী প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সংগীত, উভগীত, গেংখুলী গীতসহ নানান সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এছাড়া উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে শহরে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ মাঠ থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউটে শেষ হয়। র্যালি শেষে মনোজ্ঞ ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রতিবছর এ বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে সকল ক্ষুদ্র জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসে।
সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রনে বৈসাবি এক বৈচিত্রময় রূপ ধারণ করেছে। এই উৎসবকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন ঘটে। থাকে না কোন হিংসা-বিদ্বেষ। আশা করি বৈসাবির আনন্দ উচ্ছাসের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।
আগামী ১২ এপ্রিল বৈসাবীর প্রথম দিন চাকমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা জাতি ফুল বিজু বৈসু কিংবা বিষু উৎসব হবে। এদিন নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে শুরু হবে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
পরদিন ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মূল বিজু, বৈসু, বা বিষু। এ দিন প্রতি ঘরে রান্না হবে ঐতিহ্যবাহী পাচন। ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। আর ১৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলে মারমা ও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী জল খেলি তথা পানি খেলা উৎসব। রাখাইন, মারমা তরুন তরুনীরা জলখেলিতে অংশ নিয়ে উৎসবে মেতে উঠে। করোনা অতিমারির কারণে গত তিনটি বছরে বৈসাবি উৎসবের আয়োজন ছিল সীমিত। এবার করোনামুক্ত পরিবেশে সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে পাহাড়ের মানুষ।
সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে রাঙ্গামাটিসহ পাহাড়ের সর্বত্র বিজু বৈসুক সাংগ্রাই উৎসব আনন্দঘন পরিবেশে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি আর সৌহাদ্য বাড়বে এমন প্রত্যাশা সবার।
প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে বসবাসরত ১৩ নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বিজু, সাংগ্রাইং, সাংক্রান, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, জল উৎসব ও বাংলা নববর্ষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালন করা হয়।