বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

২০৪১ লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৩১

‘আমি সকালবেলা লেগুনায় হেলপারি করি আর বিকালে ইশকুলে যাই। আমি প্রত্যেক দিন হেলপারি কইরা ৫০০ টাকা কামাই করি। আমার কাম করতে ভাল্লাগে না। আমি পড়তে চাই। বড় হইয়া আমি একজন ব্যবসায়ী হতে চাই।’ ১১ বছরের মেরাজ হোসেন নিজের স্বপ্নের কথা এভাবেই প্রকাশ করে। মেরাজ ‘ঢাকা শহরে শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণ’ প্রকল্পের একটি ব্রিজ স্কুলের শিক্ষার্থী। এমন ৮০০ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এডুকো এবং ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইএসডিও। যৌথভাবে এর অর্থায়ন করছে কোরিয়ার চাইল্ড ফান্ড কোইকা ও এডুকো বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২০৪১ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সব শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বাংলাদেশ স্প্যানিশ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ইগনাসিও সাইলেস ফার্নান্দেজ-পালাসিওস, প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তদরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) উত্তম কুমার দাস, কোইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তেইয়ং কিম। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ।  ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইএসডিও-এর নির্বাহী পরিচালক ড. শহীদ উজজামান। নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করে ব্রিজ স্কুলের তিন শিক্ষার্থী আলিমা আক্তার, মেরাজ হোসেন ও আরেফিন সুলতান । ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিয়ে সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। অবশ্যই শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ করতে হবে। দেশে শিশু অধিকার লঙ্ঘন হয় উল্লেখ করে বলেন, এখানেই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘করোনাকালে অনেক শিশু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়েছে। ১৮ কোটি মানুষের দেশে আমাদের অনেক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বন্ধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য সফল করতে এমন প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের কাজ হবে, সরকার যাতে শিশুদের জন্য নীতিমালাগুলো যথাযথভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে, তা লক্ষ রাখা।’

উত্তম কুমার দাস বলেন, শিশু অধিকার রক্ষায় দেশে ১২টির বেশি আইন আছে, যার বেশির ভাগ অনেক পুরোনো। আইনগুলো সময় উপযোগী হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, শিশুদের শ্রম থেকে সরিয়ে নিতে না পারলে ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জন হবে না। ইগনাসিও সাইলেস ফার্নান্দেজ-পালাসিওস বলেন, শিক্ষার সঠিক প্রবেশাধিকার এবং শিশুশ্রম নির্মূল ছাড়া শিশু অধিকার নিশ্চিত করা যায় না। স্প্যানিশ দূতাবাস শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে এডুকোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং এই উদ্দেশ্যে যে কোনো সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সব সময় স্পেনের ওপর নির্ভর করতে পারে। তেইয়ং কিম বলেন, প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষা শিশুদের দারিদ্র্যের চক্র থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয় এবং তাদের স্বপ্ন দেখায় এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে উদ্বুদ্ধ করে। আব্দুল হামিদ বলেন, শুধু দরিদ্রতা নয় বরং অসচেতনতার কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকে।

অনুষ্ঠানে এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড লেবার এলিমিনেশন ম্যানেজার আফজাল কবির খান প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সহযোগী সংস্থা ইএসডিওর সহায়তায় এডুকো বাংলাদেশ নিম্নমানের বসতি এলাকার আটটি স্থানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ব্রিজ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। যেখানে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত কর্মজীবী শিশুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষায় অংশ নিতে পারে। তিনি আরো বলেন, যে বিপজ্জনক শ্রম শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। অতএব, এই ধরনের পরিবেশ থেকে শিশুদের সরিয়ে নেওয়া এবং তাদের শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকা শহরে ৮০০ শ্রমজীবী শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে প্রত্যাহার করে আনন্দঘন শিক্ষা পরিবেশের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে আলোকিত জীবন প্রদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

ইত্তেফাক/এমএএম