দেশে কমপক্ষে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ আইবিএস বা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গতকাল মঙ্গলবার দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের ব্যাধি আইবিএস দিবস-২০২৩ উদ্যাপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রা ও সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের ব্যাধি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএসের চিকিত্সার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের রোগের সব ধরনের চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এই রোগের বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার পাশাপাশি এই রোগের আরো উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। রোগ নির্ণয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য স্ক্রিনিং কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। মানুষের ধারণা রয়েছে অতিরিক্ত পানি খেলে কিডনি ভালো থাকবে, এটা ভুল ধারণা। দিনে দুই থেকে আড়াই লিটারের বেশি পানি পান করা উচিত না। দিনে দুই লিটার পানি পান করাই হলো সর্বোত্তম।’
সেমিনারে বক্তারা বলেন, আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের ব্যাধি। বিশ্ব জনসংখ্যার ১০ শতাংশ লোক আইবিএস রোগে ভুগছেন। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়, পেট ফেপে থাকা, পেটে কামড় দিয়ে পায়খানা হওয়াসহ নানাবিধ উপসর্গ প্রকাশ করে। কারো কারো ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। জীবনহানিকর কোনো সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও রোগী দীর্ঘসময় কষ্ট পেতে থাকে এবং এতে তাদের পারিবারিক, সামাজিক, পেশাগত জীবন ব্যাহত হয়। পরিপাকতন্ত্রের মাংসপেশি ও স্নায়ুর অস্বাভাবিক সংকোচন, প্রসারণ, উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণ আইবিএস রোগের কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়। উদ্বেগ ও মানসিক চাপে যারা থাকেন তারা এই রোগে বেশি ভোগেন। পুরুষের তুলনায় মহিলারা আইবিএস রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
তারা বলেন, আইবিএস রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণই রোগ নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র। যেসব খাবারে পেটের সমস্যা বাড়ে, সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, শাক, অতিরিক্ত তেলে ভাজা, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, চিনি, ক্যাফেইন ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো। মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও উপসর্গ অনুযায়ী তা প্রশমনের জন্য ওষুধ সেবন করতে হবে। মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি আইবিএস রোগীর জন্য ফলপ্রসূ। জনসচেতনতা ও কুসংস্কার দূরীকরণই হতে পারে আইবিএস মোকাবিলার মূল হাতিয়ার।
অনুষ্ঠানে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনওয়ারুল কবীরের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক ডা. মো. রাজীবুল আলমের সঞ্চালনায় আয়োজিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নুরুজ্জামান। সেমিনারে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিত্সক, শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।