শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার সুদানে কী করছে?

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:৩৩

সুদানে যখন সামরিক বাহিনীর দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তীব্র লড়াই চলছে, ঠিক তখনই রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধার বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ এই দেশটিতে আসলে কী করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

অভিযোগে বলা হচ্ছে, এই ওয়াগনার বাহিনীর সঙ্গে সুদানের বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ও সামরিক যোগাযোগ রয়েছে, কিন্তু সেখানে চলমান লড়াইয়ের সঙ্গে কোনো রকম সংশ্লিষ্টতার কথা ওয়াগনার গ্রুপ অস্বীকার করছে।

সুদানে সামরিক বাহিনীর দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তীব্র লড়াই চলছে

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন জানিয়েছেন, 'গত দুই বছর ধরে ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির একজন যোদ্ধারও উপস্থিতি সুদানে নেই। এখন পর্যন্ত সুদানের ভেতরে রুশ ভাড়াটে সেনাদের থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

মার্কিন সাংবাদিকরাও জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ওয়াগনারের যোদ্ধারা সরাসরি সুদানের লড়াইয়ে জড়িত থাকার কোনো নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু কিছু সূত্রে একটি লিবিয়ান মিলিশিয়ার মাধ্যমে আরএসএফ প্রধান জেনারেল হামদান ডাগালোর বাহিনীর কাছে অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন

আরএসএফ অবশ্য এক টুইট বার্তায় ওয়াগনারের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, বরং সুদানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গেই ওয়াগনারের সম্পর্ক আছে।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, সুদানে এর আগে এক সময় ওয়াগনার গ্রুপের কার্যক্রম ছিল এমন প্রমাণ আছে এবং দেশটিতে প্রিগোশিনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। প্রশ্ন হলো, সুদানে এই রুশ ভাড়াটে বাহিনীর কী ধরনের স্বার্থ রয়েছে?

সুদানে এর আগে এক সময় ওয়াগনার গ্রুপের কার্যক্রম ছিল এমন প্রমাণ আছে

জেনারেল হামদানের বাহিনীকে অস্ত্র দিতে চেয়েছে ওয়াগনার?

মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়, ওয়াগনার গ্রুপ আরএসএফ বাহিনীকে সার্ফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের মত শক্তিশালী অস্ত্র দেবার প্রস্তাব দিয়েছে। আমেরিকান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন যদিও মুখে বলছেন যে তিনি সুদানে শান্তির জন্য দুই গ্রুপের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চান, কিন্তু আসলে তিনি যুদ্ধ উস্কে দিতে আগ্রহী।

বলা হয়, প্রিগোশিন ও জেনারেল হামদানের আধাসামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী অস্ত্র দেবার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং এ অস্ত্র আসবে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে থাকা তাদের অস্ত্রের মজুত থেকে। 

সার্ফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র

গত বছর অক্টোবরে সুদানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই আরএসএফ কমান্ডার মোহামেদ হামদানের সঙ্গে যোগাযোগ জোরালো করেছে ওয়াগনার গ্রুপ। জেনারেল হামদান ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে মস্কোতে সফরও করে এসেছেন।

সুদানের স্বর্ণখনির চুক্তি

ওয়াগনার গ্রুপটি রুশ ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলেও এটি আসলে একাধিক কোম্পানির একটি নেটওয়ার্ক, যারা মাইনিং থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার পর্যন্ত নানা রকম কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। এর প্রতিষ্ঠাতা রুশ ধনকুবের ইয়েভগেনি প্রিগোশিন অনেকের কাছে 'পুতিনের বাবুর্চি' নামেও পরিচিত।

আরএসএফ কমান্ডার মোহামেদ হামদান

২০১৭ সালে সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির মস্কোতে এক সফরে গিয়ে রুশ সরকারের সঙ্গে অনেকগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে ছিল লোহিত সাগর তীরবর্তী পোর্ট সুদানে একটি রুশ নৌঘাঁটি স্থাপনের চুক্তি।

নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের একাধিক রিপোর্টে বলা হয়, লোহিত সাগরের তীরে ক্রেমলিন এমন একটি নৌঘাঁটি তৈরি করতে চায় যেখানে রুশ পারমাণবিক শক্তিচালিত যুদ্ধজাহাজগুলো মোতায়েন করা যাবে। 

প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির

২০২৩ সাল শেষ হবার আগেই এই ঘাঁটিটি নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ সুদানের নেতাদের সঙ্গে খার্তুমে একটি বৈঠকও করেছেন। এর বিনিময়ে রাশিয়া সুদানকে অস্ত্র এবং অন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার কথা বলেছে বলে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়।

ভিন্ন নামের কোম্পানির আড়ালে ওয়াগনার

প্রেসিডেন্ট বশিরের মস্কো সফরের সময় রুশ কোম্পানি এমইনভেস্ট ও সুদানের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলনের ক্ষেত্রে ছাড় দেবার জন্যও একটি চুক্তি হয়েছিল।

লোহিত সাগরের তীরে ক্রেমলিন এমন একটি নৌঘাঁটি তৈরি করতে চায় যেখানে রুশ পারমাণবিক শক্তিচালিত যুদ্ধজাহাজগুলো মোতায়েন করা যাবে। 

মার্কিন অর্থ দফতরের অভিযোগ, এই এমইনভেস্ট ও তাদের একটি সাবসিডিয়ারি গ্রুপ মেরো গোল্ড আসলে সুদানে ওয়াগনার গোষ্ঠীর কার্যক্রমের আবরণ হিসেবে তৈরি করা কোম্পানি। এখানে উল্লেখ্য, সুদান হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ।

২০২০ সালে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মিনুশিন জানিয়েছিলেন, ইয়েভগেনি প্রিগোশিন ও তার নেটওয়ার্ক সুদানের প্রকৃতির সম্পদকে তাদের ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য ব্যবহার করছে এবং পৃথিবীজুড়ে ক্ষতিকর প্রভাব ছড়াচ্ছে। এই এমইনভেস্ট ও মেরো, দুটি কোম্পানির ওপরই যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মিনুশিন

রাশিয়ার হাতে বিপুল পরিমাণ সোনা

সিএনএন এর এক রিপোর্টে বলা হয়, সুদান থেকে স্থলপথে সোনা বহন করে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে ওয়াগনার গ্রুপ সক্রিয় থাকার কথা সবাই জানে। এই রপ্তানির বিবরণ সুদানের সরকারি বাণিজ্যের তথ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়নি।

ব্রিটেনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় গত বছর প্রকাশিত এক রিপোর্টেও বলা হয়, সামরিক বিমানঘাঁটির এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বড় পরিমাণে সোনা বাইরে পাচার করা হয়েছে। মার্কিন সংবাদপত্রগুলো জানিয়েছে, এখানকার স্বর্ণ খনিগুলোতে ওয়াগনার গ্রুপ সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।

সুদান থেকে স্থলপথে সোনা বহন করে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে ওয়াগনার গ্রুপ সক্রিয় থাকার কথা সবাই জানে।

স্থানীয় লোকজনের মধ্যে 'রুশ কোম্পানি' নামে পরিচিত ওয়াগনারের ভালো টাকা পয়সা দেবার জন্য সুনাম আছে। মার্কিন সংবাদদাতারা জানান, এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে রাশিয়া ১৩ হাজার কোটি ডলারের স্বর্ণের মজুত গড়ে তুলেছে। যা হয়তো তাদের রুবলের মুদ্রামান ধরে রাখা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কাজে লাগছে।

সুদানে ওয়াগনার গোষ্ঠী আর কী কী করছে?

রুশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকেই রুশ ভাড়াটে যোদ্ধারা সুদানের ভেতরে অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন রকম ভূমিকা পালন করছে বলে এসব ছবিতে দেখা যায়। এর মধ্যে আছে সুদানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, বিক্ষোভ দমনের কাজে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগও আছে।

এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে রাশিয়া ১৩ হাজার কোটি ডলারের স্বর্ণের মজুত গড়ে তুলেছে।  

বিবিসি এসব ছবি নিজস্ব উদ্যোগে যাচাই করে দেখেনি। ২০২১ সালে ওয়াগনার সম্পর্কিত একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, দুই বছর আগের এক অনুষ্ঠানে ওয়াগনারের কমান্ডাররা সুদানের সেনাদের হাতে বিভিন্ন উপহার তুলে দিচ্ছে। 

এতে ২০২২ সালের জুলাই এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াগনারের ভাড়াটে সেনারা সুদানি বাহিনীকে প্যারাসুট ল্যান্ডিং এর অনুশীলন করাচ্ছে। ওয়াগনারের ২০২০ সালের একটি প্রচারণামূলক চলচ্চিত্রে সুদানকে তাদের কর্মকাণ্ড আছে এমন একটি দেশ হিসেবে তুলে ধরা হয়।

ওয়াগনারের ভাড়াটে সেনারা সুদানি বাহিনীকে প্যারাসুট ল্যান্ডিং এর অনুশীলন করাচ্ছে।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সুদানে ২০১৯ সাল থেকে ওয়াগনার গোষ্ঠী বিভিন্ন রকম কাজে জড়িত আছে। এর মধ্যে স্বর্ণ খনিতে খননকাজ ছাড়াও আছে ইউরেনিয়াম অনুসন্ধান ও দারফুর অঞ্চলে ভাড়াটে যোদ্ধা পাঠানো।

ওয়াগনারের প্রভাব কতটা?

ফাঁস হওয়া মার্কিন গোয়েন্দা দলিলপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সুদানের নিরাপত্তা বাহিনীকে এক সময় প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দিয়েছে ওয়াগনার গ্রুপ, এছাড়া সরকারের নেতাদের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছে তারা।

সুদানের নিরাপত্তা বাহিনীকে এক সময় প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দিয়েছে ওয়াগনার গ্রুপ

মার্কিন অর্থ দফতর জানিয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ সেখানে আধাসামরিক অপারেশন চালানো, একনায়কতান্ত্রিক শাসনকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থন দেয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণের মত কাজ করছে।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের ড. জোয়ানা ডে ডেউস পেরেইরা বলছেন, '২০১৮ সালের দিকে তাদের শ'খানেক লোক সুদানি সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতো, সেখান থেকেই সম্পর্কটা আস্তে আস্তে বেড়েছে।'

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের ড. জোয়ানা ডে ডেউস পেরেইরা

সুদানের সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়, এক সময় ওয়াগনারের লোকদের সংখ্যা বেড়ে ৫০০তে ওঠে। সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সীমান্তের কাছে উম দাফুকের কাছে তাদের রাখা হয়। 

সুদানের একটি পত্রিকা দ্য সুদান ট্রিবিউনের এক রিপোর্টে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির যখন ২০১৯ সালে বিক্ষোভের সম্মুখীন হন তখন নজরদারির জন্য সুদানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পাশাপাশি 'রাশিয়ান যোদ্ধাদেরকেও' মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে সুদানি কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে।

সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সীমান্তের কাছে উম দাফুকের কাছে তাদের রাখা হয়। 

বার বার সমর্থন পাল্টেছে ওয়াগনার
প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ওয়াগনার গ্রুপ তাদের নিজস্ব মিডিয়া প্রচারণার আশ্রয় নিয়েছিল। আফ্রিকায় রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপর একটি বই লিখেছেন ড. সামুয়েল রামানি। 

তিনি বলছেন, 'প্রিগোশিন আহ্বান জানিয়েছিলেন যেন বিক্ষোভকারীদেরকে ইসরায়েল-সমর্থক ও ইসলাম-বিরোধী বলে অভিযুক্ত করা হয়। এর ফলে প্রেসিডেন্টের নিজের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়। তখন আবার ওয়াগনার বাহিনী তাদের সমর্থন পাল্টে ফেলে।'

আফ্রিকায় রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপর একটি বই লিখেছেন ড. সামুয়েল রামানি। 

যে লোকটি ওমর আল-বশিরকে উৎখাত করেছিলেন, সেই জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানকেই সমর্থন দিতে শুরু করে তারা। ড. রামানি জানান, মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্র দফতর এ অভ্যুত্থানের বিপক্ষে ছিল, কিন্তু প্রিগোশিন ও ওয়াগনার গ্রুপ জেনারেল বুরহানের ক্ষমতা দখলকে স্বাগত জানায়।

২০২০ ও ২০২১ সালে ওয়াগনার গ্রুপ সুদানের জেনারেল হামদান দাগালোর আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িযে দেয়। এই আরএসএফ এখন সুদানে জেনারেল বুরহানের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান

আরএসএফ নিয়ন্ত্রিত স্বর্ণখনির দিকে প্রিগোশিনের নজর

বলা হচ্ছে, আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো সম্প্রতি কিছু সোনার খনির নিয়ন্ত্রণ পেয়েছেন। এগুলোর মাধ্যমে আরও স্বর্ণ আহরণ করতে আগ্রহী হয়েছেন প্রিগোশিন। গত বছর অক্টোবরে সুদানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই আরএসএফ কমান্ডার মোহামেদ হামদানের সঙ্গে যোগাযোগ জোরালো করেছে ওয়াগনার গ্রুপ।

জেনারেল হামদান গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে মস্কোতে সফরও করে এসেছেন। ইয়েভগেনি প্রিগোশিন জেনারেল হামদানের আধাসামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী অস্ত্র দেবার প্রস্তাব দিয়েছেন, এ খবর অতি সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে বেরিয়েছে।

আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো সম্প্রতি কিছু সোনার খনির নিয়ন্ত্রণ পেয়েছেন।

তবে সুদান সংক্রান্ত একটি থিংক ট্যাংক কনফ্লুয়েন্স অ্যাডভাইজরির খলুদ খায়ের জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস ওয়াগনার গ্রুপ সুদানের বর্তমান সংকটে কোনো পক্ষ নিচ্ছে না। ওয়াগনারের আসলে জেনারেল আল-বুরহান ও মি, হেমেডটি এ দুজনেরই বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে নানা মাত্রা এবং নানা পথে সংশ্লিষ্টতা আছে।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সক্রিয় এই ওয়াগনার গোষ্ঠী

ওয়াগনার ২০১৭ সাল থেকেই আফ্রিকায় তাদের কর্মতৎপরতা সম্প্রসারিত করেছে। লিবিয়া, মোজাম্বিক, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (সিএআর) ও মালিসহ সংঘাত চলছে এমন বিভিন্ন দেশে তারা তৎপর। বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ওয়াগনার গোষ্ঠী বেশ কয়েক বছর ধরেই সক্রিয়। 

ওয়াগনার ২০১৭ সাল থেকেই আফ্রিকায় তাদের কর্মতৎপরতা সম্প্রসারিত করেছে।

তারা সেখানকার হীরার খনি পাহারা দিচ্ছে। বিবিসি ২০২১ সালে এক অনুসন্ধান পরিচালনা করেছিল যাতে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। ওয়াগনারের একজন যোদ্ধার ফেলে যাওয়া একটি ডিজিটাল যন্ত্র থেকে এবং লিবিয়ার সেনা ও বেসামরিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

মালির সরকার ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার জন্য ওয়াগনারের দ্বারস্থ হয়। যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ গ্রুপের উপস্থিতির কথা স্বীকার করেনি। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও মালিতে রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

ইত্তেফাক/ডিএস