পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ডাহুক নদীতে চলছে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন। বলা যায়, অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি। হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা রূপ। বন্ধ হয়ে গেছে নদীর গতিপথ। নদীসংলগ্ন অনেকের জমি ও বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও অভিযোগও রয়েছে। বর্ষার সময়ে অল্প বৃষ্টিতেই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুই পাড়ের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে বিভিন্ন ফসল।
কয়েক বছর আগে, এ ডাহুক নদীর বুক চিরে পাথর তুলতে চালানো হতো অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিন। এসব মেশিন দিয়ে মাটির ২০০ থেকে ২৫০ ফিট গভীর থেকে পাথর উত্তোলনের নদীর বুকে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। এখন ড্রেজার মেশিনের পরিবর্তে নদীতে অভিনব পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চলছে পাথর উত্তোলন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, গুচ্ছগ্রাম, লোহাকাচী, বালাবাড়ি, কালিতলা ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বালাবাড়ি, কাটাপাড়া, সরকারপাড়া ও হারাদীঘি এলাকায় ডাহুক নদীতে চলছে পাওয়ার ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তুলছেন শ্রমিকরা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নদীতে প্রায় ১০০ সাইট রয়েছে। এসব থেকে সাইট থেকে রাতের আঁধারে উত্তোলন হচ্ছে হাজার হাজার সিএফটি পাথর। রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিনসহ আরো কয়েক জন পাথর শ্রমিক জানান, আমরা ডাহুক নদীতে ডুবে পাথর উত্তোলন করতাম। এতে এক গর্তে কমপক্ষে ত্রিশ-চল্লিশ জনের মানুষের প্রয়োজন হতো। এখন পাওয়ার ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন করার কারণে মানুষের প্রয়োজন হয় ৮-১০ জনের। এতে আমরা শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছি।
শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, মাঝখানে কয়েক দিন ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলা হয়েছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের নির্দেশনায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কালীতলা ব্রিজ ও ডাহুক ব্রিজের ধারে যেসব ক্ষতি হয়েছে তার কারণে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন কারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা ট্রাক্টর জব্দসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এখন ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলা বন্ধ রয়েছে। ট্রাক্টর দিয়ে যাতে পাথর তোলা না হয় সেজন্য পুলিশ সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। যাতে কোনোভাবেই কালিতলা থেকে ডাহুক নদী পর্যন্ত এ ধরনের ট্রাক্টর দিয়ে কেউ পাথর তুলতে না পারে সে সেক্ষেত্রে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডাহুক নদীতে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করেছি। এতে ডাহুক নদীর জাতীয় মহাসড়কের ডাহুক সেতুর নিচ সংলগ্ন স্থানে বালু ও মাটি কেটে পাথর উত্তোলনের অপরাধে তিন জনকে তিন দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।