সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কচি চা-পাতার দরপতনে ব্যাপক লোকসানে হতাশ চা-চাষিরা। চলমান লোকসানের জের ধরে চা-চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কয়েক হাজার ক্ষুদ্র চা-চাষি। হুমকির মুখে পড়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার চা-শিল্প। এই শিল্পকে ঘিরে নতুন নতুন চা-কারখানা গড়ে উঠলেও মিলছে না চা-পাতার ন্যায্যদাম। কারখানা মালিক ও চা-চাষিরা পালটাপালটি অভিযোগ করছেন।
চা-চাষিদের অভিযোগ, কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে চা-পাতার দাম কমিয়ে দেওয়ার কারণে তারা তাদের উৎপাদিত চা-পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে এখন চা-পাতার দামের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি। বেশ কিছুদিন ধরেই কাঁচা চা-পাতার দরপতন চলছেই। কিন্তু চা-কারখানা মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, ক্ষুদ্র চাষিরা কাঁচাপাতা তুলতে সঠিক নিয়ম না মানায় কমে গেছে চায়ের মান। সে কারণে কমেছে কাঁচা চা-পাতার দামও। কাঁচা চা-পাতার মূল্য বাড়ানোর জন্য চাষিদের নিয়ম মেনে কাঁচা চা-পাতা সংগ্রহ ও ভালো চারা রোপণের পরামর্শ দিয়েছে টি-বোর্ড।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চা-কারখানাগুলো ১৬-১৭ টাকা কেজি দরে পা-পাতা কিনছে। এখান থেকে আবার বিভিন্ন অজুহাতে শতকরা ৩০/৪০ ভাগ পাতা কেটে নিচ্ছে চা-কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি কেজি চা উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়ছে ২২-২৩ টাকা। এতে করে ক্ষুদ্র চা-চাষিদের মজুরি এবং সার কীটনাশকের খরচ জোগাতে ঘর থেকে টাকা ঢালতে হচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে ক্ষুদ্র চা-চাষিদের। তবে সম্প্রতি চাষিদের আন্দোলনের কারণে চা-মালিকরা তা কিছুটা বৃদ্ধি করে। সরকারিভাবে চা-পাতার মূল্য নির্ধারণ করলেও সেটা বহাল থাকেনি।
এক কুঁড়িতে চার/পাঁচ পাতার চা-পাতা সরবরাহের জন্য চাষিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কারখানা মালিকদের প্রতি বৃন্তে চার/পাঁচ পাতার বেশি কাঁচা চা-পাতা না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তারা এই নির্দেশনা মানছেন না। চা-কারখানাগুলো কোনো নিয়মের পরোয়া না করে বর্তমানে প্রতি কেজি চা-পাতার দর বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ১৮ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৫ টাকায় ক্রয় করছে।
সরেজমিনে উপজেলার দর্জিপাড়ার রিয়াজুল ইসলাম, শাহিনুল হক, সর্দার পাড়া গ্রামের রাজিউল হক, রঞ্জু আলী, রওশনপুর এলাকার উজ্জ্বল, সুমন, মমিন পাড়া গ্রামের হাবিব. খাল পাড়া গ্রামের মাসুদ করিমসহ অধিকাংশ চা-চাষির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, চা-চাষে ব্যাপক লোকসানে আছি। এমনিতে চা-পাতার দাম কম, তার মধ্যে অনেক সময় কারখানাগুলো চা-পাতা নিচ্ছে না। নিলেও ৩০-৩৫% পর্যন্ত কেটে নিচ্ছে। আবার চা-পাতা যাতে সময়মতো না দেওয়া যায় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে চা-কারখানা বন্ধ রাখা হয়। এবং অতি সম্প্রতি আমরা চা চাষীরা অনেক কার খানায় কাছে , তিন মাস পার হওয়ার পরেও আমরা টাকা পাচ্ছি না। চা-কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন, ক্ষুদ্র চা-চাষিরা গাছ থেকে চা-পাতা সংগ্রহের নিয়ম মানছেন না। চা-পাতার কালচার যথাসময়ে বজায় রাখছেন না। সেখান থেকে কারখানা মালিকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী চা কিনে নিয়ে যান। চলমান চা-পাতার দরপতনের অচলাবস্থা দূর হবে কী না এমন আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন চা-চাষিরা।
সুরমা পূর্ণিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসকুরুনি জানান, আমাদের উৎপাদিত প্রায় ২-৩ কোটি টাকার মূল্যের চা বিক্রি করতে পারছি না। আমরা সর্বোচ্চ ১৬-১৭ টাকা দরে পাতা কিনেছি । এর বেশি দিতে গেলে আমাদের লোকশান গুনতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা- উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, চার দফা মিটিং করার পর চা পাতার নতুন মুল্য ১৭ টাকা প্রতি কেজি নিধারন করা হয়েছে। পাতার সমস্যা থাকলে ৮ থেকে ১২ পারসেন্ট কর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। চা উৎপাদনে গুণগতমান রক্ষা করতে পারলে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।