শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দে অর্থ আদায়, আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট : ০৪ মে ২০২৩, ১৭:১৪

দিনমজুর সাহারা বেগম এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকেন। তবে এই ঘর পেতে তাকে দিতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। নাজিরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর নাম করে টাকা নিয়েছেন গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম। 

শুধু সাহারা বেগম নন তার মতো আরও ৭ নারীর কাছ থেকে ঘর দেওয়ার বিনিময়ে ৫০ হাজার করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। বুধবার (৩ মে) ভুক্তভোগী ওই  দুই নারী নজরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেছেন। 

ভুক্তভোগী ওই ৭ নারী হলেন, উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের রেজাউল করিমের স্ত্রী আসমা বেগম, ছাইফুল হোসেনের স্ত্রী ইঞ্জিরা বেগম, মৃত হাসমত আলীর স্ত্রী রাবিয়া বেগম, মৃত আবেদ আলীর স্ত্রী রিজিয়া বেগম, মৃত তারামিয়ার স্ত্রী হাবিয়া বেগম, আব্দুল হামিদের স্ত্রী সাহারা বানু ও ইয়াছিন আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন।

অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম একই ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত আমীর আলী মণ্ডলের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। মূলত রাজনৈতিক কারণে সম্প্রতি তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সামনে আসে।

জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মাস তিনেক আগে নজরুল ইসলামের নামে পৃথক দু’টি মামলা করেন গোপীনাথপুরের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ময়না বেগম ও আলাল ব্যাপারীর মেয়ে জয়নব। জয়নবের করা মামলায় ১৭ দিন জেল খাটেন নজরুল ইসলাম। এরপর বুধবার (৩ মে) মমতা ও সাহারা নামের দুই নারী বাদী হয়ে নজরুল ইসলামের নামে পৃথকভাবে আরও দুটি মামলা করেন। এ ঘটনায় নজরুল ইসলামকে সাংগঠনিক পদ প্রত্যহার করেও আবার তা বহাল রাখে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

এছাড়া ২০২১ সালের শেষের দিকে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবুর বিরুদ্ধেও সরকারি ঘর দেওয়ার নামে ১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। সে সময় চন্দ্রপুর মাঝপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের করা মামলায় ১৩ দিন জেল খাটেন তিনি। মামলাটি এখনো চলমান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নুর আহমেদ মাসুম ডেকে ওই ৭ নারীর জবানবন্দি নেন। তবে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম জবানবন্দি দিতে আসেননি।

অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম বলেন, মূলত সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিটিতে ছিলেন। টাকার বিনিময়ে কয়েকজনকে দিয়ে অভিযোগ করেছেন। সেসব অভিযোগকারীরা চতুর্থ পর্যায়ে আশ্রয়ণের ঘরও পেয়েছে। দলীয় পদ না পেয়ে তার বিরুদ্ধে দোষ চাপাচ্ছে লাবু।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু বলেন, টাকার বিনিময়ে আগের তারিখ দেখিয়ে ভূমিহীনদের প্রত্যয়ন দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। মূলত নজরুল ইসলাম রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নুর আহমেদ মাসুম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে তিনি তদন্ত করছেন। তদন্ত চলাকালীন বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইত্তেফাক/এবি/পিও