শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আতঙ্কে অভিভাবকরা

চট্টগ্রামে একের পর এক শিশু অপহরণ ও হত্যা

আপডেট : ০৫ মে ২০২৩, ০৩:২০

চট্টগ্রামে একের পর এক শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইপিজেড এলাকায় শিশু আয়াতকে হত্যার পর ছয় টুকরো করে খালে ফেলে দেওয়া এবং জামালখান এলাকায় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার রেশ না কাটতেই পাহাড়তলীতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নী অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২১ মার্চের ঐ ঘটনার দেড় মাসের মাথায় নগরীর চান্দগাঁও থানার পশ্চিম মোহরা এলাকার নির্মাণাধীন ভবন থেকে রহিম নামে ১১ বছর বয়সি এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে গোলাপের দোকান মাজারগেট-সংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। রহিম হত্যায় জড়িত সন্দেহে আজম খান ও হৃদয় নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রহিম পশ্চিম মোহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার নাম সেলিম উদ্দিন।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশী আজম খানের নেতৃত্বে গত ২৯ এপ্রিল বিকালে টাকার জন্য রহিমকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় রহিমের বাবা সেলিম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। অপহরণের দিনই শিশুটিকে নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গিয়ে হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়া হয়। থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার আজম খানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তার তথ্যের ভিত্তিতে দিবাগত রাত ৩টার দিকে শিশু রহিমের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অপহরণকারী আজম খানকে শিশু রহিম চিনতে পেরেছিল। এ কারণে নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গাছের টুকরো দিয়ে পিটিয়ে রহিমকে হত্যা করা হয়। এরপর একটি গর্ত করে রহিমের লাশ মাটিচাপা দেয় ঘাতক।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে নগরীতে মেয়েশিশু অপহরণ ও হত্যার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত ২৮ মার্চ নগরীর পাহাড়তলী থানার মুরগির ফার্ম আলমতারা পুকুরপাড় এলাকার একটি ডোবা থেকে ১০ বছরের শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ২১ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিল আয়নী। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর আয়নীকে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় মো. রুবেল নামে এক সবজি বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পিবিআই চট্ট-মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, ডোবা থেকে শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড এলাকার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিসের সামনে থেকে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু আয়াত। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা সোহেল ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ঘটনা তদন্তে নেমে আয়াতদের বাসার সাবেক ভাড়াটিয়া আবিরের সম্পৃক্ততা পায়। পিবিআই জানায়, আয়াতকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল আবিরের লক্ষ্য। কিন্তু ঘটনার দিন তার মোবাইল ফোনের সিম কাজ না করায় আয়াতের পরিবারকে সে ফোন দিতে পারছিল না। একপর্যায়ে শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করলে আবির তাকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। সেই লাশ পরদিন সকালে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয় আবির। আবিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আয়াতের লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে গত বছরের ২৪ অক্টোবর নগরীর জামালখান এলাকায় বর্ষা নামের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রী নিখোঁজ হয়। তিন দিন পর পাশের নালা থেকে বর্ষার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। বর্ষাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বন্দর থানার পোর্ট কলোনির একটি পরিত্যক্ত ভবন থেকে সাত বছর বয়সী শিশু সুরমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ওসমান হারুন মিন্টু নামে এক রিকশাচালককে গ্রেফতার করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি জানায়, চিৎকার-চেঁচামেচি করায় গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর সুরমার লাশ ফেলে সে পালিয়ে যায়। গত বছরের ১৩ মার্চ হালিশহরের থানা এলাকার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় প্রতিবেশীকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব।

ইত্তেফাক/এমএএম