নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ভোজ্যতেল থেকে চিনি, ডিম, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, সবজি সবকিছুর দামই বাড়তি। গত সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। সবমিলিয়ে স্বস্তিতে নেই ভোক্তারা। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। বাজারের তালিকা কাটছাঁট করেও সংসারের হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল শুক্রবার তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে পণ্যগুলোর দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কাওরানবাজার, নিউমার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবার কোনো কোনো দোকানে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ঈদের পর কোম্পানিগুলো থেকে চিনির সরবরাহ নেই। টিসিবির তথ্য বলছে, এক মাস আগেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১১২ থেকে ১১৫ টাকায়। আর এক বছর আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮২ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
চিনির পাশাপাশি দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে ১২ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভোজ্যতেলের আমদানিতে সরকারের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। গতকাল কাওরানবাজারে বাজার করতে আসা তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, এখন তেলের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন কি দাম কমানো হয়? আসলে আমরা ভোক্তারা অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি। নতুন দর অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা, খোলা সয়াবিনে লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়ে ১৭৬ টাকা ও পাম সুপার অয়েলের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরেই বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে। এ সপ্তাহে পেঁয়াজের সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে আদা, রসুনও। গতকাল বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এক মাস আগেও যা ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। আর সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগেও প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৮ টাকায়।
দেশি রসুনের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি রসুনে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। দেশি আদার দামও বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। তবে আমদানিকৃত আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে যা ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মাংসের মধ্যে গরু ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা ও খাসি ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম হালিতে দুই টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি সবজির দামও বেশ চড়া। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে প্রতি কেজি করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।