শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মিষ্টিকুমড়া চাষে সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন মানিকগঞ্জের কৃষকরা

আপডেট : ১১ মে ২০২৩, ০৯:২০

মিষ্টিকুমড়া চাষ করে সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন ঘিওরের ভালকুটিয়া গ্রামের কৃষক মুন্নাফ মিয়া। তিন বিঘা জমির মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তিনি আয় করেছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

তার মতো উপজেলায় আরো দেড় শতাধিক মিষ্টিকুমড়া চাষী এখন সুদিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এবার দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা কম। তবে বাম্পার ফলনে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় মিষ্টিকুমড়ার চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপযুক্ত মাটি, ভালো আবহাওয়া আর কৃষকদের সঠিক পরিচর্যায় এবার মিষ্টিকুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজধানীর সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সহজেই পাইকারি ক্রেতার মিলছে। পাইকাররা ক্ষেত থেকেই নগদ টাকায় কুমড়া কিনে নিচ্ছেন। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই কমবেশি মিষ্টিকুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। তবে বালিয়াখোড়া, চঙ্গশিমুলিয়া, মাইলাঘী, বড় বিলা, বাঙ্গালা, বালিয়াখোড়া, বরুরিয়া, পয়লা, কুইষ্টা, পুরান গ্রাম, নালী, বানিয়াজুরী এলাকায় মিষ্টিকুমড়ার আবাদ হয় বেশি। অল্প সময়, স্বল্প খরচ আর ভালো ফলনে কৃষকরা বেজায় খুশি। বেকার যুবকরাও চুক্তিভিত্তিক জমি নিয়ে কুমড়া চাষে ঝুঁকছেন।

সরেজমিনে বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুরানগ্রাম, পেঁচারকান্দা, ধুলন্ডি চকে দেখা গেছে, বাজারজাত করার জন্য ক্ষেত থেকে কুমড়া তুলে স্তূপ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

চলতি মৌসুমে ঘিওরে প্রায় ৪১০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ হয়েছে। চলতি বছর চার বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করেছেন বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুরাণ গ্রামের কৃষক পরেশ মন্ডল।

তিনি জানান, মিষ্টিকুমড়া চাষের জন্য জমি তৈরি, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ও কৃষকদের মজুরিসহ বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় আট হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৮০০ থেকে অন্তত এক হাজার মিষ্টিকুমড়া পাওয়া যায়। যার পাইকারি বাজারদর ৩০ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় বাজারে খুচরা বিক্রি করলে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়া যায়।

নালী গ্রামের কৃষক মামুন মিয়া জানান, তার ক্ষেতের মিষ্টিকুমড়া গড়ে ৩০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছেন। পাইকাররা ক্ষেত থেকে নিয়ে যায়। তাই ঝামেলা কম হয়। এককালীন নগদ টাকাও পাওয়া যায়।

সাভারের আশুলিয়া এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, এখানকার উত্পাদিত মিষ্টিকুমড়া সুস্বাদু ও আকৃতিতে বড় হয় বলে চাহিদা বেশি। এ বছর তিনি চার লাখ টাকার মিষ্টিকুমড়া কিনেছেন। সপ্তাহে দুবার তিনি কুমড়া কিনে আশুলিয়ার বাইপাইল কাঁচা বাজার আড়তে বিক্রি করেন।

মানিকগঞ্জ কাঁচাবাজারের আড়তদার মো. আলী হোসেন বলেন, ঢাকার বাজারে মানিকগঞ্জের মিষ্টিকুমড়ার বেশ চাহিদা। জেলার সঙ্গে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো। গত এক মাসে তিনি প্রচুর মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করেছেন। এবার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। আকারভেদে প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা অন্য ফসলের সঙ্গে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করছেন। ভালো ফলন হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে চাষীরা মিষ্টিকুমড়ার আবাদে ঝুঁকছেন। কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ইত্তেফাক/আরএজে