ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাচীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো’। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কলা ভবনের কক্ষ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। তবে সম্প্রতি ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ তাদের গবেষণা কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ১০ মে গবেষণা ব্যুরোর অধীনে থাকা ৩০৫২ নম্বর কক্ষটিকে তালাবদ্ধ করে দেয় বিভাগটি। এতে করে গবেষণা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। তবে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিভাগ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন ঐ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর অফিসের কার্যক্রম চলছে ৩০৫১(ক) কক্ষে। তাদের অধীনে থাকা ৩০৫২ নম্বর কক্ষে তালা। দরজায় ‘ইহা একটি প্রতিবাদ’ শিরোনামে একটি লিফলেট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা, ‘এই রুমটি ছয় মাস আগে স্পেস বরাদ্দ কমিটি আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের নামে বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু ব্যুরোর এক জন কর্মকর্তা তা দখল করে আছেন; তাই রুমটিতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হলো।’ আর সেই লিফলেটের নিচে লিখা ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’। এ বিষয়ে ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকেরাই এমনটি করেছেন। এই লিফলেট লাগানো হয়েছে অফিস সময়ের পরে। তখন শিক্ষার্থীরা কেউই থাকে না। ইসলামের ইতিহাস বিভাগ কলা ভবনে তাদের আধিপত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।’এছাড়া আরও দেখা যায়, ৩০৬৯(খ), ৩০৬৬, ৩০৬৩, ৩০৬১ নম্বর কক্ষে তালা না দিয়ে শুধু লিফলেট লাগিয়ে শিক্ষকদের কক্ষ ছেড়ে দেওয়ার সতর্কবাণী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহাবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ বলেন, ‘গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর বিভাগ আলাদা বিষয়। ৬৭ বছর ধরে আমরা এখানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বরাদ্দ কমিটি যদি ঐ বিভাগকে কক্ষটি বরাদ্দ দিয়েও থাকে, তারা আমাদের জানাবে। কিন্তু তাদের থেকে আমরা এ ধরনের চিঠি পাইনি। কেউ এসে বললেই আমরা রুমটি ছেড়ে দিতে পারি না। ব্যুরো প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই কক্ষটি ব্যবহার করছে। হুট করে এক জনের রুম অন্য জন নিয়ে যেতে পারে না। ইসলামের ইতিহাস বিভাগ গত ফেব্রুয়ারিতে আমাদের একটি চিঠি দিয়ে কক্ষটি তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া আছে বলে জানায়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমি কলা অনুষদের ডিনের কাছে জানতে চেয়ে চিঠি লিখেছি, কিন্তু তার কোনো উত্তর পাইনি।’ স্পেস বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ও প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কাজ চলমান। এর বেশি কোনো তথ্য দিতে নারাজ।
স্পেস বরাদ্দ কমিটির সদস্য ও কলা অনুষদের ডিন ড. আব্দুল বাছির বলেন, স্পেস বরাদ্দ কমিটির সিদ্ধান্তে কিছু বিভাগকে কিছু নতুন কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যারা বরাদ্দ পেয়েছে তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন বরাদ্দ পাওয়া কক্ষ ব্যবহার করতে। তবে আগে থেকে যারা কক্ষ ব্যবহার করে আসছে, তাদের এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে কক্ষ ছাড়তে বলা হয়নি বলে তিনি জানান। ৩০৫২ নম্বর কক্ষে তালা লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্পেস বরাদ্দ কমিটি আমাদের কিছু রুম দিয়েছে। আমরা কিছুদিন ধরে ঐ রুমে বসা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু তারা কোন সাড়া দিচ্ছেন না। কক্ষে তালা লাগানোর বিষয়ে তিনি অবহিত নন বলে জানান। তার ধারণা, শিক্ষার্থীরা এটি করতে পারে।