২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডরের চাইতে প্রলয়ংকরী হয়ে উঠতে পারে ‘মোখা’। সিডর প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই শঙ্কার পূর্বাভাস দিয়ে জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে। বর্তমান গতি প্রকৃতি অনুযায়ী সুপার সাইক্লোনটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে রবিবার একটি অংশ কক্সবাজার দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে। সবচেয়ে শক্তিশালী অংশটি মিয়ানমারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে। কক্সবাজার, বরগুনা, নোয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং আমেরিকান জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানিয়েছে, গতকাল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবার পর ‘মোখা’র গতি নেমে এসেছে অর্ধেকে। অর্থাৎ গতি কমিয়ে আরও ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করছে ঝড়টি। দানবীয় হয়ে উঠছে মোখা। এতে বাড়ছে আতঙ্ক, আশঙ্কা করা হচ্ছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির। এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা গতকাল রাত ৯টার দিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আজ এটি সুপার সাইক্লোন বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি বুধবারও ঘণ্টায় ১৫-১৬ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছিল। গতকাল রাতে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের চারপাশে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। এটি বর্তমানে ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার গতিবেগে অগ্রসর হচ্ছে স্থলভাগের দিকে। এই গতি অব্যাহত থাকলে রবিবার দুপুরের পর এটি স্থলভাগে ছোবল হানতে শুরু করতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মোখার গতিপথ এখন পর্যন্ত ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে হলেও আজ শুক্রবার উত্তর-পূর্বে বাঁক নিয়ে সেটি বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোবে। এ ধারায় রবিবার মোখা আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। এ অবস্থায় দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আমেরিকান জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বুলেটিন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ৯৫ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ১৭৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়)। গত রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিশেষ বুলেটিনে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। গতকাল রাতে ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আগামীকাল শনিবার থেকে ঝড়ের প্রভাব শুরু হতে পারে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় দমকা বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হবে।
এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে ‘মোখা’ উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধে নানা ধরনের প্রস্তুতি চলছে। কক্সবাজার-টেকনাফসহ উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন লোকজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পৃথক নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে স্থগিত হতে পারে এসএসসি পরীক্ষা। এদিকে ভয়ে দ্বীপ ছাড়ছেন সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। আমেরিকার নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় মোখা ঘণ্টায় প্রায় ১৭৭ কিলোমিটার বেগে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। কক্সবাজার জেলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের যে অংশটি অতিক্রম করতে পারে, সেই অংশটি অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী থাকবে; ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে অতিক্রম করবে।
দিক পরিবর্তন করে এগোতে পারে ‘মোখা’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোখা শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। এতে বলা হয়, মোখা আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১১.৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৯ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মোখার কেন্দ্র ঘিরে অনেক মেঘ ও বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে শুরু করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এর ব্যাসার্ধ ছিল প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার। মোখা ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার গতি নিয়ে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে যে কোনো সময় এই গতি বাড়তে পারে। কেন্দ্র ও প্রান্ত মিলিয়ে ব্যাসার্ধ ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।