আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ। আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের নার্স: আমাদের ভবিষ্যৎ।’ আধুনিক নার্সিং সেবার সূচনা করেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নার্সিং সেক্টরকে আন্তর্জাতিক মানে নেওয়ার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সিং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে আটটি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করেন। এন্ট্রি পয়েন্টে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সাড়ে ১৪ বছরে সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে ৩৩ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নার্সিং পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করেন। সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতেই এ উদ্যোগ। দেশে এমএসএন, এমডি, এমপিএইচ সহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চতর কোর্স চালু আছে। দেশ-বিদেশের এই উচ্চতর ডিগ্রীধারী সহস্রাধিক নার্সও কর্মরত আছেন। কিন্তু তারা সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নার্সিং কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তাদের কেউ কেউ আগের যে পদে ছিলেন সেই পদের বেতনেই প্রিন্সিপাল, আবার কেউ কেউ সিনিয়র স্টাফ নার্স। এছাড়া নার্সিং কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও লেকচারার পদেও দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র স্টাফ নার্সরা। নার্সিং কলেজ ও অধিদপ্তরে নিয়োজিত নার্সিং কর্মকর্তারা নিজ বেতনে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকে সিলেকশন গ্রেড পাবেন, কিন্তু সেটাও দেয়া হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন রেজিস্টার্ড নার্স প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে ডাক্তারের তুলনায় নার্সের সংখ্যা কম। তারপরও কোভিডের সময় ডাক্তারের পাশাপাশি নার্সরা যে ভূমিকা রেখেছেন তা প্রশংসনীয়। বিরতিহীনভাবে তারা রোগীদের দিয়েছেন তারা। নার্সিং সেক্টরের মান উন্নয়নে সরকার আন্তরিক হলেও তা বাস্তবায়নে বাধা পাচ্ছে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অনভিজ্ঞতা। দেশে নার্সিং সেক্টরে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করায় উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরও ৯৫ ভাগ নার্সের পদোন্নতি মেলে না। চাকরিতে প্রবেশ ও বিদায় একই পদে থেকেই। অর্থাৎ সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকরি যোগদান করে বিদায়ও নিতে হচ্ছে একই পদে থেকে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, সরকারবিরোধী কোন কোন কর্মকর্তা নার্সদের আন্দোলনে ফেলে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন। এমন দাবি করছেন নার্সিং নেতৃবৃন্দ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে হাসপাতালের শয্যা, চিকিৎসক এবং নার্সের অনুপাত হারে। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত ৩ নার্স থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী দেশে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৯১ নার্স প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, যার যা প্রাপ্য তা অবশ্যই দিতে হবে। যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি না হলে রোগীদের সেবায় বিঘ্নিত ঘটবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া বলেন, চিকিৎসা সেবায় ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা হলেন হলো টিমওয়ার্ক। নার্সরা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নার্সিং সেক্টরকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। বাস্তবায়নও করে যাচ্ছেন। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। নইলে রোগীদের সেবা ব্যাহত হবে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর বলেন, আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকা নার্সিং কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি রেলি বের হবে। এছাড়া সকল নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট থেকে দিবসটি উপলক্ষে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসা সেবায় নার্সদের গুরুত্ব অনুধাবন করে পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তর করেছেন। বর্তমানে ডিজিটালের যুগে নার্সদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখে সঠিক সেবা পাওয়া যাবে না। তাই তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি দিতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাচিপের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে
‘রোগীর সেবায় আরও আন্তরিক হতে হতে’ শিরোনামে গত ১১ মে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদের একাংশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর বরাদ দিয়ে বলা হয়েছে, একজন রোগীকে ডাক্তার শুধু দেখে যান, আর নার্সরা সার্বক্ষণিক সেবা দেন। প্রকৃত পক্ষে তার বক্তব্য হবে, ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎসা দেন। আর নার্সরা সেবা দেন।