শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অন্য মাছের ক্ষতি করে নিষিদ্ধ চিংড়ির পোনা শিকার!

আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ১৩:৩০

অন্য প্রজাতির মাছের পোনার ক্ষতি করে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে নির্বিচারে চলছে গলদা চিংড়ির রেণু পোনা শিকার। স্থানীয় ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চারটি স্পটে এ পোনা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি থানার সামনের হাটেও এই নিষিদ্ধ কাজটি হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। 

রায়পুরের এই চার স্পট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ও ঘের মালিকরা ড্রাম কিংবা পাতিল ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে। পোনা শিকার নিষিদ্ধ হলেও বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেঘনা পাড়ের আট হাজার জেলে চিংড়ি এ পোনা সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করে থাকে বলে অভিযোগে রয়েছে।

এসব চিংড়ি রেণু সংগ্রহের সময় নষ্ট হচ্ছে অন্য প্রজাতির মাছের পোনা।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে উপকূলীয় এলাকায় মাছের পোনা আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রতি বছর রায়পুরের উপকূলীয় এলাকার মেঘনা নদীতে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত রেণু আহরণ ও বিক্রির উৎসব চলে। এই সময়কালে মেঘনা পাড়ের জেলেরা মশারি, নেট জাল, ছাকনি ও চাদর দিয়ে এ পোনা শিকার করে বিক্রি করেন উপজেলার পানিরঘাট, পুলিশ ফাঁড়ির সামনের হাজীমারা ঘাট, নতুন ব্রিজ ও মেঘনা বাজারসহ চারটি স্পটে। এসব স্পটে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার পোনা লেনদেন হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তদারকি না করায় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এভাবে অবাধে মাছের পোনা নিধন চলছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মেঘনার জেলেরা চিংড়ির পোনা শিকারের ব্যস্ত। ছবি: ইত্তেফাক

সরজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় হাজামারা বাজারের শাহাজার গাজী মোল্লারহাট পানির ঘাট নিয়ন্ত্রণ এবং নিজ বাড়িতে পোনা বিক্রি করছেন নাছির গাজী। একইভাবে হাজীমারা এলাকার নতুন ব্রিজ ঘাট নিয়ন্ত্রণ ও পোনা বিক্রি করছেন দুলাল চৈয়াল ও তৈহিদ সর্দার। এছাড়া উত্তর চরবংশী মেঘনা বাজার ঘাট নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রি করছেন জয়দুল কবিরাজসহ পাঁচ জন ব্যবসায়ী, যার মূলত এই নিষিদ্ধ ব্যবসার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী। আর এটাই হচ্ছে উপজেলার নিষিদ্ধ পোনা বিক্রির চার হট স্পট।

স্থানীয় জেলে ফিরোজ, কালু মাঝি, মনির ও রবিনসহ জেলেদেরে অভিযোগ, নদীতে সংগ্রহ করা পোনা ওই চারটি স্পট থেকে প্রতিদিন বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলার মহাজনরা এসে তাদের কাছ থেকে চিংড়ির রেণু কিনে নিয়ে যায়। প্রতি হাজার চিংড়ি রেণু বিক্রি হয় আড়াই হাজার টাকায়। অনেক সময় তারা শাহাজার গাজী, নাছির গাজী ও জয়দুল কবিরাসহ মহাজনদের অগ্রিম টাকাও দিয়ে থাকেন। তবে চিংড়ির পোনা বাছাইয়ের সময় অন্য মাছের ডিম ও পোনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে থাকলেও কেউ বাধা দিছে না।

চিংড়ি রেণু ক্রেতা হাজীমারা বাজারের শাহাজান গাজী, পানির ঘাট এলাকার নাছির গাজী ও মেঘনা বাজারের জয়দুল কবিরাজদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গলদা পোনা ধরে ধ্বংস করা হচ্ছে কোটি কোটি মাছের পোনা ও জীববৈচিত্র্য। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এমন অন্যায় কাজ করছে বলে জানান সিন্ডিকেট হোতারা।

তারা জানান, চিংড়ির পোনা বাছাইয়ের সময় নষ্ট হয়ে যায়। কিন্ত এ ব্যবসায় আমাদের কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। তাই সবাইকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চালিয়ে এখন সড়ক পথ বা নদী পথে দিয়ে বেশি পোনা নেওয়া হয়।

মেঘনা থেকে শিকার করা চিংড়ির পোনা গনে দিচ্ছেন উপজেলার হাজীমারার ব্যবায়ীদের। ছবি: ইত্তেফাক

চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ ও বিক্রির কথা স্বীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, নদী থেকে চিংড়ির রেণু পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একশ্রেণির অসাধু লোকজন গলদা চিংড়ির পোনা শিকার করছে। এসব পোনা ধরার সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ওঠে। চিংড়ির পোনা বাছাইয়ের সময় বাইলা (বেলে), সুরকা, পোয়া, পাঙাশ, বাছা, বাতাসি, পাবদাসহ ৭০টি প্রজাতির মাছের ডিম ও পোনা নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা মেঘনা বাজারের স্পট রেণু পোনা বিক্রির সময় একটি গাড়ি জব্দ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে রেণু ধরার সরঞ্জামাদি পুড়িয়ে ফেলছি। এসব নিষিদ্ধ ব্যবসার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো হাত নেই।

ইত্তেফাক/আরএজে