বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জার্মানিতে স্কুলে উগ্র-ডানপন্থী হামলা বাড়ছে

আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ১৬:৩৩

জার্মানিতে প্রতিদিন পাঁচজন উগ্র-ডানপন্থী হামলার শিকার হচ্ছেন। তরুণদের উপর এই ধরনের হামলা বাড়ছে। এপ্রিলের শেষে জার্মানির দুই স্কুল শিক্ষক মাক্স টেস্কে ও লরা নিকেল একটি চিঠি প্রকাশ করেন। এতে তারা তাদের প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্ণবাদী হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

চিঠিতে তারা লিখেছেন, ক্লাস চলার সময় তারা উগ্র-ডানপন্থী গান বাজাতে শুনেছেন। এছাড়া স্কুলের আসবাবপত্রে স্বস্তিকা গ্রাফিতি দেখেছেন এবং স্কুলের করিডোরে কটূক্তি শুনেছেন। তারা বলেন, 'আমাদের স্কুলে বিদেশি চেহারার বা বেশি সহনশীল শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত, বুলিং ও সহিংসতার হুমকির মুখোমুখি হয়।' 

জার্মানিতে প্রতিদিন পাঁচজন উগ্র-ডানপন্থী হামলার শিকার হচ্ছেন।

তারা আরো সামাজিক কর্মী নিয়োগ, শিক্ষকদের জন্য আরো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং স্কুলগুলোতে গণতন্ত্র প্রচারের জন্য আরো উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি জার্মানির কোটবুস শহরে স্কুল কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে উগ্র-ডানপন্থী হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন এই দুই শিক্ষক। 

সেই সময় মাক্স টেস্কে বলেন, 'স্কুলে বর্ণবাদ, যৌনতা ও হোমোফোবিয়ার সমস্যা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে।' এটি পুরো সমাজের জন্য হুমকি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। উগ্র-ডানপন্থী, বর্ণবাদী ও ইহুদি বিদ্বেষের শিকারদের পরামর্শ দেয়া সংস্থাগুলোর সংগঠন ভিবিআরজির প্রধান হাইকে ক্লেফনার জানিয়েছেন, ২০২২ সালে ইহুদি বিদ্বেষ ও বর্ণবাদী হামলার শিকার হওয়া শিশু ও তরুণের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। 

সম্প্রতি জার্মানির কোটবুস শহরে স্কুল কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে উগ্র-ডানপন্থী হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন এই দুই শিক্ষক।

এমন হামলায় শারীরিকভাবে আহত ৫২০ জনের বেশি শিশু ও তরুণ ২০২২ সালে জার্মানির বিভিন্ন ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়েছেন বলে জানান তিনি। সবমিলিয়ে ২০২২ সালে প্রায় দুই হাজার ১০০টি উগ্র-ডানপন্থী, বর্ণবাদী ও ইহুদি বিদ্বেষ সংক্রান্ত হামলা হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭০০টি বেশি। 

এসব হামলার শিকার দুই হাজার ৮৭১ জন বিভিন্ন ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার পরিদর্শন করেছেন। তবে ক্লেফনার বলেছেন, 'এই সংখ্যা নাটকীয় বাস্তবতার ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। হামলার সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করি আমি।' 

এমন হামলায় শারীরিকভাবে আহত ৫২০ জনের বেশি শিশু ও তরুণ ২০২২ সালে জার্মানির বিভিন্ন ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়েছেন বলে জানান তিনি।

ক্লেফনার বলেন, 'আমরা এমন অনেক ঘটনা জানি যেখানে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তারা বিষয়গুলো প্রকাশ্যে বলতে ভয় পান। কারণ, অপরাধীরা তাদের আশেপাশেই থাকেন। এছাড়া তাদের আশঙ্কা, এসব ঘটনার জন্য হয়ত তাদেরকেই দায়ী করা হতে পারে।'

এই ধরনের হামলা ভুক্তভোগীর উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে বলে জানান তিনি। যেমন গত বছর ফেব্রুয়ারিতে টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের এক সুইমিংপুলে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আট বছরের এক ছেলের প্রতি বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন। ছেলেটিকে ধাক্কা ও লাথি দিয়েছিলেন। 

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের এক সুইমিংপুলে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আট বছরের এক ছেলের প্রতি বর্ণবাদী মন্তব্য করেছিলেন।

ক্লেফনার জানান, এই হামলার কারণে ছেলেটি এখনও আতঙ্কিত জীবনযাপন করছে এবং তাকে থেরাপি নিতে হচ্ছে। মে মাসের শুরুতে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বার্লিনের কাছে এক লেকের পাড়ে হলিডে ক্যাম্প করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অংক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া ছিল এই ক্যাম্পের উদ্দেশ্য। 

বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অভিবাসী পরিবারের সন্তান ছিলেন। ক্যাম্প চলার সময় স্থানীয় যুবকেরা দশম শ্রেণির ঐ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ করেছিলেন এবং তাদের মারারও হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্যাজা। 

ঐ ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে মধ্যরাতে ক্যাম্প ত্যাগ করতে হয়েছিল। এই ঘটনাকে 'ভয়াবহ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্যাজা। 

তিনি বলেন, 'এটি আরো ভয়ানক এই কারণে যে এই ঘটনায় যারা হামলার শিকার হয়েছেন তাদেরই (অপরাধীদের পরিবর্তে) পিছু হটতে হয়েছে।' ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে এই ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইত্তেফাক/ডিএস