সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘কষ্টের জীবন’ নামে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন তারেক। প্রথমে আগ্রহী তরুণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন। এরপর সাক্ষাতের জন্য গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ডেকে এনে জিম্মি করে আদায় করতেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে ব্ল্যাকমেইলের হুমকি ও নির্যাতন করত তারেকের চক্র। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এই চক্রের ডাকে ঢাকায় আসেন আমির হোসেন নামে এক তরুণ। চক্রের ফাঁদে পড়ে দেখা করতে গিয়ে জিম্মি হন। মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু মুক্তিপণ না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতা তারেকসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃরা হলো—তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ, মোহাম্মদ হৃদয় আলী, আশরাফুল ইসলাম, রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকা আসেন। ২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে চক্রের সদস্যরা তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়ে ফোন করে।
ঐ ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন দক্ষিণখান থানায় ঐ দিনই সাধারণ ডায়েরি করেন। তারই সূত্রে অপহৃত আমিরের খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ। গত ১৩ এপ্রিল বিল্লাল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
মোর্শেদ আলম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। তিন জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীকে গ্রেফতার করে দক্ষিণখান থানার বিশেষ একটি দল। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দি গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দেওয়া হতো। প্রস্তাবে রাজি হওয়া তরুণদের গাজীপুরের চৌরাস্তা, শ্রীপুর ও মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় সাক্ষাতের জন্য ডেকে মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিত চক্রটি। মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করা হয়। এরপর বস্তায় লাশ ভরে বাসার পেছনে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রেখে আত্মগোপনে চলে যায় তারা।