ঈদে বাড়ি এসে নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করি। এবার গিয়েছিলাম বারহাট্টায়। কবি ও গীতিকার এনামূল হক পলাশের বামনগাঁও গ্রামে। চিরাম ইউনিয়নের এই গ্রাম হাওড় বেষ্টিত জনপদ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশাকে সংযুক্ত করেছে। পাকা সড়ক বারহাট্টা থেকে চলে গেছে সুনামগঞ্জ জেলার গাছতলা বাজারে।
বারহাট্টা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বামনগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে এসেই যেন থমকে দাঁড়ায়। এই প্রাইমারী স্কুলের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি ভাস্কর্য ‘কুপি বাতি’। এ যেন অজ পাড়াগায়ে জমাট বাধা অন্ধকারে একবিন্দু আলোর ফোয়ারা। আমার সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নেয় এই ভাস্কর্য। আর মনে মনে সংকল্প করি এটা নিয়ে কিছু লেখার।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সহজিয়া সাধনার কবি এনামূল হক পলাশ নিজ গ্রামে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করেছেন। ভাস্কর্যটি তৈরি করে দিয়েছেন বিখ্যাত ভাস্কর অখিল পাল। এটি অন্য ভাস্কর্যের চেয়ে একটু আলাদা। গ্রাম-বাংলায় বিদ্যুৎ আসার আগে যে কুপি বাতি ঘরে ঘরে জ্বলতো; তার ভাস্কর্য এটি। ভাস্কর্যের নীচে শ্বেত পাথরে খোদাই করা একটি কবিতা। অসাম্প্রদায়িক এবং কোনো ধর্মীয় চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় এমন একটি ভাস্কর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গ্রামের সৌন্দর্য্য।
এ বিষয়ে কবি এনামূল হক পলাশের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিটি মানুষের জীবন কুপি বাতির মত ক্ষীণ। আলো দিতে দিতে একদিন শেষ হয়ে যায়। জীবনকে এই কুপিবাতির সঙ্গে উপমা দেওয়া যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এটি স্থাপন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, অজ পাড়াগায়ের এই সব বিদ্যালয় থেকে ছড়িয়ে পড়ে জ্ঞানের আলো। এ ছাড়া কুপি বাতি আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ। এটা এখন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। আমি চেয়েছি আমাদের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও যেন ভুলে না যায়।’
ভাস্কর অখিল পালের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি অনেক নামকরা ভাস্কর্য নির্মাণ করেছি। কিন্তু কবির চিন্তার সঙ্গে মিলিয়ে কাজটি করে দিতে পেরেছি বলে আমি আনন্দিত। এটির মর্ম হয়তো অনেকে এখন বুঝবেন না কিন্তু এটা সুদূরপ্রসারী একটি শিল্পকর্ম হিসেবে একদিন নন্দিত হবে।