দুই বছরের শিশু প্রত্যয়। এ বয়সে স্বভাবতই জগতের জটিল কঠিন নিয়ম তার বোঝার কথা নয়। যে বয়সে মায়ের কোলে বসে আধো আধো বুলি শেখার কথা, সেই বয়সে বড়দের সঙ্গে মানববন্ধনে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে। সেটিও নির্মম এক উপলক্ষে, মায়ের মৃত্যুর বিচার চাইতে!
জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নিজ শ্বশুরালয় থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম উর্মির লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় বিষয়টিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আত্মহত্যা বলা হলেও উর্মির পরিবার দাবি করে এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও যথোপযুক্ত বিচার না পেয়ে রোববার (২১ মে) বেলা ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাদদেশে মানববন্ধন করে তার সহপাঠীরা। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে উর্মির মা-বাবা, বোন, শিক্ষক ও সহপাঠীসহ বিভিন্ন বিভাগের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উর্মির শিশুসন্তান প্রত্যয়ের উপস্থিতিতে আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আসামিদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে বেরিয়ে এসেছে এবং এই বিচারকার্যকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য মামলার নানাবিধ প্রমাণ যা ছিল সব নষ্ট করার পায়তারা করছে।
তারা আরও বলেন, যেখানে হত্যাকাণ্ডের মামলা নেওয়া হয়েছে সেই জায়গায় পুলিশ কি করে একটি ইউডি মামলা প্রতিবেদন দাখিল করে এবং বাদীকে একটা আত্মহত্যা মামলা হিসেবে আর্জি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে!
বক্তারা উর্মি হত্যার সঙ্গে জড়িত তার স্বামী প্রিন্সসহ তার শুশুর, শাশুড়িকে জড়িত দাবি করে এরসঙ্গে পরোক্ষভাবে যারা মদদ দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, কোনো নিশাত ঊর্মি যেন এভাবে হত্যার শিকার না হয়। বিচার বঞ্চনায় যেন কোনো পরিবার নিভৃতে না কাঁদে।
উর্মির দু’বছর বয়সী শিশুপুত্র প্রত্যয়কে কোলে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিচারের দাবি জানিয়ে উর্মির মা বলেন, ছাত্রসমাজের কাছে আমার নিবেদন তারা আমার মেয়ে হারানোর যন্ত্রণাকে নিজেদের যন্ত্রণা মনে করুক এবং আমার সঙ্গে বিচারের দাবিতে তারা রাস্তায় নেমে আসুক।
উর্মির বাবা বলেন, পুলিশি রিপোর্টে বলা আছে তার গলা টিপে ধরায় আঙ্গুলের কালো ছাপ রয়েছে। গালে কালো দাগ আছে এবং প্রিন্সের আংটির দাগও আছে। তারপর হাসপাতালে থেকে পুলিশ যখন তার রিপোর্ট করে তখন হত্যা মামলা নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময় ময়নাতদন্তের পরে সেখানে বলা হয়েছে আত্মহত্যা করেছে। আদালতে এর বিরুদ্ধে না রাজি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলাম। পরবর্তীতে পিবিআই কুষ্টিয়া এর তদন্ত করছে। আমার চাই এর সুষ্ঠু বিচার হোক।
এ প্রসঙ্গে গাংনী থানার ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলাটির অধিকতর তদন্তের স্বার্থে পিবিআই এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
পিবিআই কুষ্টিয়া জোনের পুলিশ সুপার মো. শহীদ আবু সরোয়ার বলেন, মামলাটি আমরা সম্প্রতি হাতে পেয়েছি। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে মামলাটি তদন্ত করে সঠিক তথ্য উদঘাটন করা হবে।