শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আখাউড়ায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে প্রতারক চক্র উধাও

আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ০৩:৪৪

চার বছরে জমা করা টাকার দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিংস নামে একটি প্রতারক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪৮টি কিস্তিতে লাভ ও আসল ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় কোম্পানির স্থানীয় এজেন্টরা। তাদের খপ্পরে পড়ে ব্রাইট ফিউচারে টাকা আমানত রাখেন চাকরিজীবী, প্রবাসফেরত, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। কিন্তু গত তিন থেকে চার মাস ধরে প্রতিশ্রুতির লাভ ও আসলের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। এছাড়া ঐ কোম্পানির এজেন্টদেরও আর দেখা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আমানতকারীদের ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

কয়েক জন আমানতকারী ও এলাকাবাসী জানান, গত তিন থেকে চার বছর আগে ঢাকার উত্তরাস্থ ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিংস নামের একটি প্রতিষ্ঠান আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নে আর্থিক কার্যক্রম শুরু করে। ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি আর প্লটের স্বপ্ন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নেওয়া হয়। লোভে পড়ে দুই শতাধিক আমানতকারী ব্রাইট ফিউচারে টাকা দিয়েছেন। একেক জন ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। সব মিলে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঐ কোম্পানিটি। আমানতকারীদের অভিযোগ, কয়েকটি কিস্তি দেওয়ার পর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় এ প্রতিষ্ঠান। তাদের এজেন্টরাও এখন এলাকা ছাড়া।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উত্তর ইউনিয়নের আজমপুরের হাবিবুর রহমান বাচ্চু, আনোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, আমোদাবাদ গ্রামের মোশারফ হোসেন, রাজাপুরের শ্যামল, মারফত আলী ব্রাইট ফিউচারের এজেন্ট হিসেবে এলাকার মানুষকে প্রলুব্ধ করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তবে নিজেরা টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন মোশারফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও হাবিবুর রহমান বাচ্চু।

আজমপুর গ্রামের মহরম আলী বলেন, ২০২২ সালের মে মাসে আজমপুরের হাবিবুর রহমান বাচ্চুর মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা দেই। আমাকে বিশেষ অফারে ৩৬ মাসে দ্বিগুণ লাভের কথা বলে টাকা নেয়। তারপর সাতটি কিস্তিতে ১ লাখের কিছু বেশি টাকা পেয়েছি। এখন আর পাচ্ছি না। লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাই পাবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বাচ্চুকে ফোন করলে শুধু আশ্বাস দেয়। আমোদাবাদ গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, আমি টাকা পাইনি। আমোদাবাদের মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। ১ লাখ টাকা পেয়েছি। বাকি টাকা এখনো পাইনি।

রামধননগরের জামাল খান বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে ২ লাখ টাকা দেই। এ বছরের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ টাকা দিয়েছি। পাঁচটি কিস্তিতে লাভ আসলে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। আজমপুরের কামালের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি। কামাল বলেছিল এই কোম্পানিটি জায়গা কিনে প্লট বিক্রি করে। আরেক ভুক্তভোগী আমোদাবাদ গ্রামের নিয়াজ ভূইয়া বলেন, মোশারফের মাধ্যমে আমি ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। ৪৬ মাসে ডবল টাকা দিবে বলেছিল। ১ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছি। সিঙ্গারবিল বাজারের ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন দিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। আড়াই লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। বাকি টাকা আটকে আছে। আজমপুরের কামালের মাধ্যমে তিনি টাকা দিয়েছেন বলে জানান।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন কোম্পানির এজেন্ট নন দাবি করে বলেন, যারা টাকা দিয়েছেন, নিজেরা ঢাকায় গিয়ে অফিস দেখে কথা বলে টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোম্পানিটি জায়গা কিনে প্লট করে বিক্রি করে ব্যবসা করে। তাছাড়া তাদের কয়েকটি বড় বিল্ডিংও আছে। টাকা দেওয়া বন্ধ থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুনেছি কোম্পানির কয়েক জন ডিরেক্টর কিছু টাকা আত্মসাত্ করেছে এজন্য এমডি অফিস বন্ধ করে রেখেছেন। আমি নিজেও কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগ করে এখন ফকির হয়ে গেছি। আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কয়েক জন আমানতকারী আমাকে ব্রাইট ফিউচারে টাকা দেওয়ার কথা মৌখিকভাবে বলেছেন।

ইত্তেফাক/ইআ