রোববার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কী বিস্ময় করিতেছে অপেক্ষা—হইবে না রোগ? বাড়িবে না বয়স?

আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ০৫:৫৩

কয়েক বৎসর পূর্বে ‘নেচার’ নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এক গবেষণায় বলা হইয়াছে যে, স্তন্যপায়ী প্রাণী অবশ্যই বৃদ্ধ হইবে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ড. সিনক্লেয়ার ইতিপূর্বেই দাবি করিয়াছেন যে, বৃদ্ধ হওয়াটা একটি রোগ। ইহার চিকিৎসা করা যায়, বৃদ্ধ হওয়াটা বিলম্বিত করা যায়। এমনকি বন্ধও করা যায়! এই ব্যাপারে সিনক্লেয়ার ব্যাখ্যা দিয়াছিলেন যে, ২০০ বৎসর পূর্বে একজন মানুষ সবচাইতে দ্রুত ভ্রমণ করিতে পারিত একটি ঘোড়া যত জোরে ছুটিতে পারে সেই গতিতে। এখন নূতন প্রযুক্তি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাইয়াছে। সেই পরিবর্তনের হাওয়া লাগিয়াছে জীববিজ্ঞানেও। সিনক্লেয়ার মনে করেন, রোগব্যাধি হঠাৎ করিয়া হয় না। ইহা শরীরের ভিতর বাসা বাঁধে। ধীরে ধীরে তাহার উপসর্গ, লক্ষণ প্রকাশ পায়। মৃত্যুও আসে সময়ের পথ পাড়ি দিয়া। বৃদ্ধ হইবার প্রক্রিয়াটিও একই রকম। সিনক্লেয়ার দাবি করিয়াছেন যে, তাহারা প্রমাণ করিয়াছেন—এই রোগও সারানো যায়, প্রতিহত করা যায়, কিংবা ইহার প্রকাশ বিলম্বিত করা যায়। তাহারা অবশেষে তিনটি জিনের সন্ধান পাইয়াছেন—যেইগুলিকে বলে ইয়ামানাকা ফ্যাক্টরস। এই জিনগুলি কোষের পরিচয় বদলায় না; কিন্তু বৃদ্ধ হওয়া আটকাইয়া দেয়। ইতিপূর্বে তাহারা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালাইয়াছেন, ইঁদুরগুলির চোখের স্নায়ু নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। ড. সিনক্লেয়ারের দল ঐ ইঁদুরের চোখের স্নায়ুতে প্রাণ ফিরাইয়া তাহাদের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার করিয়াছেন বলিয়া দাবি করিয়াছেন।

যদিও বলা হয়, বিজ্ঞানের যতগুলি শাখা রহিয়াছে, তাহার মধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞান সবচাইতে কম বিকশিত। তবে বিজ্ঞানীরা নূতন নূতন প্রযুক্তির সাহায্যে নূতন সকল দ্বার উন্মোচন করিতেছেন, যাহা মাঝেমধ্যে আমাদের মনে চমক জাগায়, আশা জাগায়। সম্প্রতি বিবিসির একটি রিপোর্টে জানা গিয়াছে, মানুষের রোগ হয় কেন, আর কী করিয়াই-বা তাহা প্রতিহত করা যাইতে পারে—তাহা জানিতে হাজার হাজার মানবদেহ ও মস্তিষ্কের উপর এক নূতন ধরনের গবেষণা চলিতেছে যুক্তরাজ্যে। এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে ইতিমধ্যে অংশ লইয়াছেন ৬০ সহস্রাধিক মানুষ—যাহাদের দেহ ও মস্তিষ্ক স্ক্যান করিয়া আরো ভালোভাবে জানিবার চেষ্টা করা হইবে যে, মানুষের বয়সবৃদ্ধির পাশাপাশি তাহাতে কী পরিবর্তন হয়। ইহার ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, ডেমেনশিয়া বা স্মৃতি লোপ পাইবার মতো রোগগুলিকে পূর্ব হইতেই চিহ্নিত করিবার পথ উন্মুক্ত হইতে পারে। আশার কথা হইল—এই গবেষণার ফলে ইতিমধ্যেই একটি জেনেটিক পরীক্ষা উদ্ভাবিত হইয়াছে—যাহা দিয়া কোনো মানুষ যদি হূদেরাগের বাড়তি ঝুঁকি লইয়া জন্মান—তাহা শনাক্ত করা যাইতে পারে। ইহাতে অংশ নেওয়া সকল স্বেচ্ছাসেবীর উপাত্ত যুক্তরাজ্যের একটি বায়োব্যাংকে সংরক্ষিত হইতেছে এবং ৯০টিরও অধিক দেশের গবেষকরা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্যভান্ডার ব্যবহার করিতেছেন। ইহার ফলে আমাদের যতই বয়স বাড়িতেছে, তাহার সহিত আমাদের প্রত্যঙ্গগুলিতে কী পরিবর্তন হইতেছে—তাহা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করিতে পারিবেন গবেষকরা। ইহার ফলে রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়া বা সাধারণ ডাক্তারি পরীক্ষায় তাহা চিহ্নিত হইবার অনেক বৎসর পূর্বেই একেকটি রোগের চিহ্নগুলি শনাক্ত করিতে তাহা সহায়ক হইবে।

মানুষ অমর হইবে না কোনো দিনই। কারণ জন্মিলে মরিতেই হইবে। তবে যত অধিক বয়সে যত অধিক সুস্থভাবে মানুষ বাঁচিতে পারিবে, ততই এই পৃথিবীর অর্থনীতির জন্য মঙ্গল। পশ্চিমা বিশ্বের কিছু অর্থনীতিবিদের আনুমানিক হিসাব বলিতেছে, মানুষের গড় আয়ু মাত্র দুই বৎসর বাড়াইতে পারিলে শুধু আমেরিকাতেই আগামী কয়েক দশকে দেশটির অর্থনীতিতে ৮৬ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হইবে। আর মানুষকে যদি আরো ১০ বৎসর স্বাস্থ্যকর জীবন দেওয়া যায়, তাহা হইলে এই মূল্য দাঁড়াইবে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে। প্রশ্ন হইল, কোথা হইতে এই বাড়তি আয় আসিবে? আসলে মানুষ কম অসুস্থ হইলে শুধু আমেরিকায় রোগের চিকিৎসায় খরচ হওয়া হাজার হাজার কোটি ডলার বাঁচিবে। মানুষ সুস্বাস্থ্যময় জীবন অর্জন করুক, ইহা সকলেই চাহে। তবে পৃথিবীর ভারসাম্যের জন্যও ভাবিতে হইবে। কারণ পৃথিবীর মঙ্গলার্থে সকল মানুষই সমান গুরুত্বপূর্ণ নহে। মানুষ কখনো-সখনো পৃথিবীর জন্য বোঝাও বটে। যদিও বিজ্ঞানের অধিকাংশ আবিষ্কারে মঙ্গলের পাল্লাই ভারী থাকে।

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন