রোববার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শিশুদের সাইবার অপরাধ প্রতিহতে সচেতনতা অপরিহার্য

আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ০৭:৩০

থ্রিজি পার করিয়া ফোরজি এবং ক্রমশ আমরা ফাইভজি প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হইতেছি। স্মার্ট ফোন এখন বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর হাতে। বিশেষ করিয়া, মধ্যবিত্ত ঘরের শিশু-কিশোররাও তাহাদের পিতামাতার স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করিতেছে অহরহ। ফলে সাইবার অপরাধ ঝুঁকিতে পড়িতেছে বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোর। নূতনরূপে বাড়িতেছে সাইবার অপরাধপ্রবণতাও। তবে বুলিং কমিতেছে বলিয়া এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গিয়াছে। ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৩’ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নূতন ধরনের অপরাধের মাত্রা বাড়িতেছে। প্রতিবেদনে ২০১৫-২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ তুলিয়া ধরা হইয়াছে বেশ কয়েকটি ধাপে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচাইতে অধিক (২ শতাংশের অধিক) অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে তরুণরা ১২ শতাংশের অধিক—যাহাদের মধ্যে অপরাধের মাত্রা ক্রমশ বাড়িতেছে বলিয়া দেখা গিয়াছে। এই সকল অপরাধের মধ্যে রহিয়াছে নানামাত্রিক প্রতারণা। তবে বরাবরের মতো অন্তর্জালের সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হইয়াছে। কেবল একটিই ইতিবাচক দিক দেখা গিয়াছে, তাহা হইল—বিগত পাঁচ বৎসরে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কমিয়াছে সাইবার বুলিং-সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা। এই সাইবার বুলিংয়ের মধ্যে রহিয়াছে অনলাইন ও ফোনে বার্তা পাঠানো, পর্নোগ্রাফি, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ও ছবি বিকৃতি। তাহা ছাড়া সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য আইডি হ্যাকিংয়ের সকল ঘটনা ধারাবাহিকভাবে কমিলেও অর্থসংশ্লিষ্ট প্রতারণা থামিয়া নাই। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার ২৫ শতাংশই নারী। ইহা চিন্তার বিষয়।

প্রযুক্তির রঙিন দুনিয়া শিশু-কিশোর ও নারী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুরুতে প্রবেশ করে আনাড়ির মতো। তাহারা না জানিয়া না বুঝিয়া কিংবা অতিরিক্ত কৌতূহলে ফাঁদে পা দেয়। ইতিপূর্বে সমগ্র বিশ্বেই আরেকটি সমস্যা প্রকট হইয়াছে—যাহাকে বলা হয় অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম’। অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম’ শিশুদের ধ্বংসাত্মক মানসিকতা বাড়াইয়া তুলিতেছে। ইহা যেন ভয়াবহ এক নেশা! এমনও অনেক ঘটনা আছে যে, অল্প বয়সে সাইবার অপরাধ বা হেনস্তার শিকার হইয়া আত্মহত্যার পথও বাছিয়া লইতেছে অনেক শিশু-কিশোর-নারী। সকালে ঘুম ভাঙিবার পর রাতে ঘুমাইতে যাওয়া পর্যন্ত অধিকাংশ সময় মোবাইল স্ক্রিন হইতে চোখ না সরাইবার মতো শিশু-কিশোরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়িতেছে। এখন আবার পড়াশুনার দৌলতে কম্পিউটারের দিকে তাকাইয়া থাকিবার সময়ও বাড়িয়াছে। ফলে ক্ষতির মাত্রাও বাড়িতেছে দিনদিন। সম্প্রতি আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তির গবেষক জ্যাসন নাগাটা বলিয়াছেন, স্ক্রিন টাইম কমাইয়া, শিশুদের শারীরিক ভাবে সক্রিয় করিয়া তুলিতে পারিলে এই সমস্যার সমাধান হইতে পারে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম এবং সকলের সহিত মেলামেশা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সমস্যা হইতে শিশুদের উদ্ধার করিতে হইলে অভিভাবকদের সকলের পূর্বে সচেতন হইতে হইবে।

অনেক অভিভাবকই শিশুর হাতে মোবাইল গুঁজিয়া দেন নিজের সুবিধার্থে। তাহাতে শিশুটি ব্যস্ত থাকে মোবাইলের ম্যাজিকে। যেন শিশুটির হাতে একটি চমৎকার ললিপপ ধরাইয়া দেওয়া হইয়াছে! শিশুটি অভিভাবকদের বিরক্ত করে না বটে; কিন্তু শিশুটি যেই অন্তর্জালের গভীরে ডুব দিয়া ভয়ংকর কোনো জগতে ক্রমশ চলিয়া যাইতে পারে—এই বিপদটি বুঝিতে পারেন না অধিকাংশ অভিভাবক। অনেক শিশু আবার স্কুলে গিয়া বন্ধুদের নিকট গর্বের সহিত বলে, তাহার নিজের ইউটিউব চ্যানেল আছে, এত এত ভিউ হইয়াছে, এতগুলি সদস্যতা পাইয়াছে! শুনিয়া তাহার অন্য সহপাঠীরা ভাবে, তাহাদেরও চ্যানেল থাকিতে হইবে। তাহারাও মোবাইল ফোন দিয়া ভিডিও বানাইবে। ইহা সাধারণ প্রবণতা; কিন্তু ইহাতে ক্রমশ তাহারা সাইবার জগতে আরো বিভিন্ন অলিতে গলিতে চলিয়া যায়। এই ব্যাপারে গবেষকরা বলেন, শিশুদের সহিত বন্ধুর মতো মিশিতে হইবে। কারণ, ভয় পাইলে বা ভুল করিলে শিশুরা তাহাদের মনের কথা সহজভাবে বলিতে পারিবে না। উহাতে আরো অধিক বিপদ হইবে। সুতরাং সাবধান থাকিতে হইবে শুরুতেই। সচেতন হইতে হইবে সকল অভিভাবককে।

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন