বাজেট ঘোষণা হবে জুন মাসের ১ তারিখে। বাজেট ঘোষণার আগে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে কতো ভেতরের খবর তুলে ধরতে পারছেন। প্রকাশিত তথ্যের যদি ৮০ভাগ সঠিক হয়, তাহলে পত্রিকার খবর অনুসারে ৬২ ভাগ ধনী আরো ধনী হয়েছেন আর মধ্যবিত্ত বিলুপ্তির পথে।
আর আমাদের কদম আলী চিন্তায় পরে গেলেন, তাহলে কি তিনি সমাজের দ্বিতীয় স্তর থেকে আরো নিচের স্তরে চলে গেলেন? বুঝলেন না কেন? হঠাৎ মনে হলো বাজেট এর আগে ডিজেল ও ডলারের দাম বাড়ায় জীবন যাত্রার ব্যয় ৩৪ ভাগ বেড়েছে । বেতন করোনার কারণে এখনো আগের অবস্থায় আছে।
এই হিসাব মাথায় ঢোকার পর বুঝতে আর বাকি রইলো না, তিনি আসলে তৃতীয় স্তরের সমমানের জীবন যাপন করায়, মধ্যবিত্তের খাতা থেকে নাম কাটা গেছে। কি আর করা, কদম আলী সেটা নিয়তি ভেবে মেনে নিলেন। এর পর প্রশ্ন তৈরি হলো উনার সারা জীবনের লেখা-পড়ায়। তিনি কমার্স গ্র্যাজুয়েশন হওয়ায় জানতেন, একটা লেনদেন এর প্রথম শর্ত একজন দাতা ও অন্য জন গ্রহীতা। তিনি বন্ধুদের সাথে মধ্যবিত্ত থাকা অবস্থায় পাঁচ কাঠা জমি দশ জনের নামে কিনেছিলেন।
এবার সবাই মিলে রেশিও অনুসারে টাকা দিয়ে নিজেরা ছয় তলা বিল্ডিং তৈরি করলেন। গ্রাউন্ড ফ্লোর, গ্যারেজ ও উপরের পাঁচ তলার দশ ইউনিট লটারির দ্বারা দশ বন্ধু ভাগ করে বন্ডক নামা দলিল করতে গেলেন। সেখানে জানানো হল সেটার উপর আয়কর ধার্য করা হয়েছে। কদম আলী বললেন ভাই এখানে তো ক্রেতা বিক্রেতা নাই তাহলে এই ধার্যকৃত আয়কর কার জন্য অগ্রিম হবে।
আগে তো যিনি জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতেন সেটা পরিশোধ করলেও, ঐ বিক্রেতার অগ্রিম আয়কর হিসাব সমন্বয় করতে পারতেন? এখন তো জমিও আমার নামে এবং বিল্ডিং তৈরি করেছি আমার টাকা দিয়ে, যা আমার আয়কর ফাইলে দেখানো আছে। এখন তো এই জায়গা শুধু ভাগ করতে এসেছি, ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়াতে। এখানে করের প্রশ্ন কেন আসলো? কদম আলী এত সবের মধেও শুকরিয়া আদায় করলেন। হিসাব বিজ্ঞানের জনক লোকা প্রসিলিও মারা গিয়েছেন, নাহলে এই সিঙ্গেল এন্টির হিসাব দেখে উনার স্ট্রোক করতে হতো।
সমাধান না পেয়ে অন্য খবরে গেলেন, যেখানে বলা হচ্ছে বিদ্যুতের উপর সরকার ভর্তুকি প্রত্যাহার করলে মূল্য বাড়বে ৬৫%। বেচারা কদম আলী বাসায় ফেরার পথে হারিকেন কিনে নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবছিলেন, যাক আবার ছেলে বেলায় ফেরা গেল। হঠাৎ টনক নড়লো, যখন পত্রিকায় দেখলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হলো। তিনি চিন্তা করলেন এগুলোতে তাও হিসাব করা গেল নিজের অবস্থান, কিন্তু এখন তো আর লিমিট রইলো না। মনে মনে বললেন একটু অন্ধকারে থাকলে কিছু হয় না।
কদম আলী এবার নজর দিলেন মূসক আদায় ও পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনার খবর দেখতে। সেটা তার আরো মজা, ও সেটা এবার তাকে শহর ত্যাগ করার অবস্থায় নিয়ে যায় কিনা সেটা বুঝতে পাঠকদের নিকট থেকে দুইদিন সময় চাইলেন সেটার উপর আরো অধিকতর গবেষণা করে নিজের গ্রামে ফিরে নিজেকে সকলের নিকট হাসির পাত্র হওয়া থেকে রক্ষা করা যায় কিনা।
তবে কদম আলী সকল খারাপ কিছুর মধ্যে নিজের সান্ত্বনা খুঁজতে ভালো কিছু বের করার চেষ্টা করেন এবং সেটা খুব দ্রুত পেয়েও গেলেন। ভাবলেন বাজেট ঘোষণার পর মিষ্টি বিতরণের মিছিল হলেও পরের দিন আগের মতো বাজেট না মেনে হরতাল তো হবে না।
সকালে শান্তিতে ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়ার ঝামেলা না থাকায় ঘুমিয়ে পড়লেন। স্বপ্নের মধ্যে আয়করের আত্মা এসে তাকে বললেন ভাই এভাবে যেখানে সেখানে তাকে প্রয়োগ করে শুধু আদায় বৃদ্ধির কথা চিন্তা থেকে তার মূল চেতনা আয়কর অর্থাৎ আয় হলে কর হবে, সেটা যদি না থাকে তাহলে তার বেঁচে থেকে কি লাভ হবে? সে আত্মহত্যা করবে এবং তার জায়গায় ইচ্ছেকর ব্যবস্থা নামে নতুন কর সিস্টেম চালু করার অনুরোধ করে যেই আত্মহত্যা করতে যাবেন, তখনই গিন্নির ডাক এই উঠো অফিসের দেরি হলে আবার বেতন কাটা যাবে।
লেখকঃ ভ্যাট বিশেষজ্ঞ, তিনি ভ্যাটবন্ধু নামে পরিচিত