সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

তাহাদের অপতত্পরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি

আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ০৩:৩২

আমরা বারেবারে বলিয়া আসিতেছি স্বাধীনতাবিরোধীদের ব্যাপারে আমাদের সর্বতোভাবে সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে। এই দাবি যেন অরণ্যে রোদনে পরিণত না হয়। কেননা যাহারা দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নহে, এমন দিন আসিতে পারে, যেই দিন তাহারা দেশের সকল শক্তির নিয়ন্ত্রক হইয়া উঠিতে পারে। তাহারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে বিশ্বাস করে না। তাহারা একদিকে যেমন রাজনীতিকে কলুষিত ও বিষাক্ত করিয়া তুলিতেছে, তেমনি দেশ ও জাতিকে ঠেলিয়া দিতেছে হুমকির মুখে। ইহা সকলে অবগত রহিয়াছেন যে, স্বাধীনতাবিরোধীদের চিন্তাচেতনার কোনো পরিবর্তন হয় নাই। তাহাদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করিয়াছে। শুধু বিরোধিতাই করে নাই, তাহারা মহান মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়াছে। তাহাদের উত্তরসূরিরাও অনেক ক্ষেত্রে তাহাদের পূর্বপুরুষদের সেই ধ্যানধারণার ঘেরাটোপ হইতে এখনো বাহির হইয়া আসিতে পারিতেছে না। তাই তাহাদের ব্যাপারে আমরা আবারও সতর্ক হইবার আহ্বান জানাই।

যাহারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও লক্ষ্যকে নানাভাবে খাটো করিয়া দেখিয়াছে ও ইহাকে বিকৃত করিবার চেষ্টা করিয়াছে, তাহাদের বংশধরেরা এখন অনেক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি রক্ষার ধারক ও বাহক হইয়া উঠিতেছে। আজ সত্যি আমরা বুঝিতে পারিতেছি না তাহাদের হাতেই কেন প্রায় ক্ষেত্রে রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি একপ্রকার বন্দি হইয়া পড়িতেছে। তাহাদের আসল ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য কী তাহা অনুমান করা কাহারও পক্ষে কষ্টকর নহে; কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে এতই ব্যস্ত রহিয়াছি যে, সেইদিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নাই। ভবিষ্যতে যাহা ঘটিবে বা ঘটিতে পারে সেই ব্যাপারে আমরা ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারিতেছি না। ইতিমধ্যেই তাহারা প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যেই অনুপ্রবেশ করিয়াছে। অর্থবিত্ত দ্বারা ক্রয় করিয়া লইয়াছে ছোট-বড় বিভিন্ন দলের পদ-পদবি। কেনো কোনো ক্ষেত্রে তাহারা এখন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছিয়া গিয়াছে। এমনকি দুঃখজনক হইলেও সত্য, ক্ষমতাসীন দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বও তাহারা দখল করিয়া বসিয়াছে। অনেক ক্ষেত্রে তাহারা এই দলটিকে গ্রাস করিয়া ফেলিতেছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি, ঘুষ, দুর্নীতিসহ হেন কোনো অন্যায়-অপকর্ম নাই যাহা তাহাদের দ্বারা সংঘটিত হইতেছে না। তাহাদের একটি অংশ মাদকের মতো অত্যন্ত ঘৃণিত ব্যবসায়ের সহিত জড়িত হইয়া পড়িতেছে। দলকে তাহারা তাহাদের যাবতীয় অপকর্মের সাইনবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করিতেছে। তাহারা এই সকল যাহা করিতেছে তাহা কোনোমতেই জাতীয় স্বার্থের পক্ষে যাইতে পারে না। শুধু তাহাই নহে, তাহারা প্রশাসনকেও ম্যানেজ ও কবজা করিয়া ফেলিতেছে। প্রশাসনকে দুর্নীতির আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া ফেলিতেছে। আর এইভাবে তাহারা তাহাদের প্রভাব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করিতেছে।

এতদিবষয়ে তাহাদের বিরুদ্ধে শুধু নামকাওয়াস্তে তদন্ত করিয়াই ক্ষান্ত হইলে চলিবে না, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের মাধ্যমে তাহাদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করিলে ভবিষ্যতে যদি জাতীয় নির্বাচন ভন্ডুল হইয়া যায়, কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্বাচন তাহাদের করায়ত্তে চলিয়া যায়, তাহা হইলে আমরা আশ্চর্যান্বিত হইব না। আজ তাহাদের যতই তুচ্ছ মনে  করা হউক, একসময় তাহারা হইয়া উঠিতে পারে বিস্ফোরণোন্মুখ ও বিষফোড়াস্বরূপ। তাহারা তখন এই জনপদকে করিয়া তুলিতে পারে বসবাসের অনুপযুক্ত। অতএব, আমরা এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতন হওয়া উচিত বলিয়া মনে করি।

 

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন