শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বাঘের বল ১২ বছর!

আপডেট : ২৫ মে ২০২৩, ০১:১১

বলা হয়ে থাকে বাঘের বল ১২ বছর! প্রচলিত অর্থে প্রবাদটি দ্বারা বুঝায় মানুষের শক্তিমত্তার নির্দিষ্ট সময়কালকে। বস্তুত প্রবাদটি এসেছে বাঘের আয়ুষ্কালে জৈবিক কর্মক্ষমতার সময়সীমা থেকে। সম্প্রতি সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে এ বিষয়ে কথা হয় সুন্দরবন করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবিরের সঙ্গে। আলাপচারিতায় জানা যায়, সুন্দরবনের ফ্ল্যাগশিপ এই প্রজাতির সম্পর্কে অজানা নানান তথ্য। ১৬ থেকে ১৮ বছরের জীবনকালে ১২ বছর বয়সে পুং ও স্ত্রী উভয় বাঘের ক্যানাইন টিথ বা শিকারি দাঁত পড়ে যায়। ফলে দুর্বল হয়ে গেলে স্ত্রী বাঘ আর বাচ্চা দিতে পারে না। বাঘ সাধারণত মানুষের ওপর আক্রমণ করে না। তবে অনেক সময় মানুষের ওপর আক্রমণ ঘটে অসুস্থ বা বয়োবৃদ্ধ বাঘ দ্বারা যারা শিকার করতে পারে না, তাই খাদ্য সংকটে মানুষের উপস্থিতিতে এরা মানুষের ওপর আক্রমণ করে। এছাড়া সুন্দরবনের মৌয়াল ও বাওয়ালিরাও বাঘের অনিচ্ছাকৃত আক্রমণের শিকার হন।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার সাধারণত বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে পাওয়া যায়। যদিও একসময় এদেশের মধুপুর, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলত, বর্তমান এসব অঞ্চলে বাঘের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। সেই হিসেবে বাংলাদেশের সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাস্থল। সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। স্বভাবতই বাঘ টেরিটোরিয়াল প্রাণী। একটি পুরুষ বাঘ বিরাট এলাকা নিয়ে তার নিজের টেরিটরি সৃষ্টি করে। খাদ্যের প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে টেরিটরি ছোট-বড় হয়ে থাকে। যেমন—রাশিয়াতে বাঘের টেরিটরি প্রায় ১ হাজার বর্গকিলোমিটার,  অপরদিকে সুন্দরবনের বাঘের টেরিটরি ২৫০-৩০০ বর্গকিলোমিটার। সাধারণত নখের আঁচড় কেটে বা প্রস্রাব-পায়খানার মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করে রাজ্য সৃষ্টি করে থাকে। এই  রাজ্যের মধ্যে একটি পুরুষ বাঘের বিপরীতে সর্বোচ্চ সাতটি স্ত্রী বাঘ থাকতে পারে (বন্যপ্রাণীর ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত ১: ৭)। তবে স্ত্রী বাঘেরও আলাদা আলাদা রাজ্য থাকে যা সৃষ্টি করে দেয় পুরুষ বাঘটি।

সুন্দরবনের বাঘের প্রধান খাবার চিত্রা হরিণ। ম্যানগ্রোভ বনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য পানিতে সাঁতার কাটার বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। এরা পানিতে দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে এবং পানি থেকেও শিকার করতে পারে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবন তথা বাংলাদেশের পরিচিতির প্রতীক। প্রকৃতির এই অপরূপ সুন্দর প্রাণীটি আজ পৃথিবী থেকে বিলুপ্তির পথে। এর মূল কারণ চীনে বাঘের মাংস ও চামড়ার চাহিদা বেশি থাকায় অবৈধ চোরাচালানকারীরা নির্বিচারে বাঘ হত্যা করে বাঘের চামড়া ও মাংস চীনে রপ্তানি করে। ফলে সুন্দরবনের রাজাখ্যাত এই প্রাণীটির জীবন বিপন্ন করে তুলছে।

এ ছাড়াও অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে বনজঙ্গল কেটে উজাড় করা হচ্ছে যাতে বাঘের স্বাভাবিক আশ্রয়স্থল নষ্ট হয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে বাঘের বিচরণক্ষেত্র, হ্রাস পাচ্ছে বাঘের উপযোগী খাদ্য। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, মিঠাপানির সংকট ও অবৈধ শিকারও রয়েছে। বাঘ হারিয়ে যাওয়া মানে একটি অঞ্চলের সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া। তাই প্রকৃতির এই অপরূপ সুন্দর প্রাণী রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন