বিরাট কোহলি। শচীন টেন্ডুলকারের অবসরের পর ভারতের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম। সেই কোহলিই চেয়ে চেয়ে দেখলেন কীভাবে তার রাজ্যে হানা দিলেন এক যুবক। ম্যাচ শেষে হাতও মেলালেন তার সঙ্গে। শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাটনটাও কি হাতবদল হয়ে গেল তাতে? সেটা সময়ই বলবে। তবে কোনও রাখঢাক না রেখে বলে দেওয়াই যায়- ক্রিকেটে এখন চলছে শুভমান গিলের দিন। ভারতীয় মিডিয়া যাকে ডাকছে ‘শো-ম্যান’ গিল নামে।
দেশের জার্সির পর এখন গুজরাট টাইটানসের জার্সিতে আইপিএলেও দাপট দেখাচ্ছেন শুভমান। কী ব্যাটিং! যা করতে চাইছেন, তাই হচ্ছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবলীলায় মেরে যাচ্ছেন ছক্কা।
শুরুতে যে কোহলির কথা বলা হচ্ছিল, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ওই ম্যাচটির কথা ধরুন। প্লে-অফে ওঠার জোর সম্ভাবনা ছিল তাদের। দলের সেরা খেলোয়াড় কোহলির সেঞ্চুরিতে জয়ের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু কীসের কী! এমন এক ইনিংস খেললেন, যাতে ভেঙে চুরমার হলেন কোহলি। শুভমানের সেঞ্চুরির কাছে মাথা নত হলো কোহলির।
এই শুভমান প্রথম কোয়ালিফায়ারেও গুজরাটকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঠিকঠাক হলো না। ফল যা হওয়ার তাই। চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হার। চিপকের ওই ম্যাচের রাগই সম্ভবত শুভমান উগড়ে দিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে। আহমেদাবাদে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ভয়ঙ্কর ব্যাটিংয়ে করলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। ৬০ বলে ১২৯ রানের টর্নেডো ইনিংস। তাতে গুজরাটের ফাইনাল তো নিশ্চিত হলোই, একই সঙ্গে শুভমান নিজেকে নিয়ে গেলেন উঁচু থেকে আরও উঁচুতে। ২০২৩ আইপিএলে তিন সেঞ্চুরিতে রান হলো ৮৫১। ফাইনাল এখনও বাকি!
সেঞ্চুরি যেন ডালভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে শুভমানের ব্যাটে। কিন্তু জানেন কি শুভমানের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনের গল্প? মাত্র ২৩ বছর বয়সেই তারকাখ্যাতি পেয়ে যাওয়া এই ব্যাটসম্যানের ক্রিকেট জার্নি সহজ ছিল না। এজন্য ছোট শুভমানকে যতটা না, তার চেয়ে অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তার বাবা লখবিন্দর সিংকে। সেটা কীভাবে?
শুভমান কৃষক পরিবারের সন্তান। তার জন্ম ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি ফাজিলকা গ্রামে। পরিবারের সবাই কৃষক। তার বাবা এখনও কৃষিকাজ করেন। ওই রকম প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব নয়। সেকারণেই ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে চণ্ডীগড় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বাবা লখবিন্দর। গ্রামের জীবন ছেড়ে বড় শহরে জীবনধারণ মোটেও সহজ ছিল না। তাছাড়া মোহালিতে এসেও ক্রিকেটের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলো না গিল পরিবার।
এর মাঝেই একদিন ঘটলো অদ্ভুত এক ঘটনা। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার কার্সান ঘাভরি মোহালিতে গিয়েছিলেন নতুন বোলার খোঁজার মিশনে। বোলার সেভাবে না পেলেও তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন ব্যাটার। তিনিই আজকের শুভমান।
দিনটি ছিল বৃষ্টির। সহকারীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন ঘাভরি। সেসময় দেখেন বৃষ্টির মধ্যেও মাঠে খেলা চলছে। দারুণ ব্যাট করছে একটি ছেলে। ছেলেটি সম্পর্কে আশেপাশে যে কাউকে জিজ্ঞেস করবেন, সেরকমও কাউকে পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ চোখ পড়ে এক গাছতলায়। দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে এক মধ্যবয়স্ক খেলা দেখছেন। তার কাছে গিয়েই ঘাভরির প্রশ্ন, ‘এই ছেলেটি কে?’ মধ্যবয়স্ক লোকটির উত্তর, ‘ও আমারই ছেলের।’
সেই শুরু। পরদিনই ঘাভরির বোলিং ক্যাম্পে যোগ দেন শুভমান। অবশ্যই ব্যাটার হিসেবে। কারণ অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ওই বোলারদের অনুশীলনের জন্য ব্যাটারও তো দরকার! ১২ বছর বয়সী শুভমান তার চেয়ে বেশি বয়সী বোলারদের বিপক্ষে করলেন দুর্দান্ত ব্যাটিং। এরপর জায়গা মেলে পাঞ্জাব অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বয়সভিত্তিক দলের সিঁড়ি ভেঙে এখন তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সেনসেশন।
হয়তো আগামীর সবচেয়ে বড় তারকাও! কোহলির সেঞ্চুরিতে শুভমানের জবাব নিশ্চয় দেখছেন? কৃষকের ঘর থেকে এখন তিনি ‘শো-ম্যান’ গিল!