নাটোরের গুরুদাসপুরে শেরিন শিমরাহ শাবাহাত রাইম ও শাফাকাত শুফাইক রোরি নামে এতিম দুই শিশু’র পৈত্তিক সম্পত্তি দখলে নিতে প্রায় ১০টির বেশি মামলা করেছে প্রতিপক্ষ। সামসুল হক নামের এক ব্যক্তি ওই সম্পত্তি দখলে নিতে এসব মামলা করেছেন। শুধু মামলা করেনি, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১০ লাখ টাকায় বাগানের লিচুও বিক্রি করেছে। সামছুল হক উপজেলার মামুদপুর গ্রামের মৃত দবু মোল্লার ছেলে।
জানা যায়, দুই শিশু শেরিন শিমরাহ শাবাহাত রাইম ও শাফাকাত শুফাইক রোরি প্রয়াত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা দম্পতির সন্তান। ২০১৮ সালে শফিকুল ইসলাম মারা গেলে তার বাবা ইউসুফ আলী নিজ নামের ৫০ কোটি টাকার সম্পদ এতিম নাতি-নাতনিকে বঞ্চিত করে তিন মেয়ের নামে লিখে দেন।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধে প্রয়াত শফিকুল ইসলামের মা রাবেয়া বেগমের সম্পদ নিয়ে। স্ত্রী রাবেয়া বেগম মারা যাওয়ার পর রাজশাহীতে মেয়ের বাড়িতে থাকতেন ইফসুফ আলী। সে সময় নিজের জমিজমা মেয়েদের নামে লিখে দেন। একপর্যায়ে স্ত্রীর রেখে যাওয়া প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদও দখলে নেন। সামসুল হক নামের এক ব্যক্তি এসব জমিজমা দেখভাল করেন।
এতিম ওই দুই শিশুর জমি দখলে নিতে সিভিল ক্রিমিনালসহ ১০টির বেশি মামলা করেছেন সামসুল হক। এসব মামলায় প্রতিপক্ষ করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিন ও তার সহযোগীদের। সপ্তাহখানেক আগে ইউসুফ আলীর পক্ষে আদালতের ১৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক ৩০ বিঘা বাগানের লিচু প্রায় ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন সামসুল হক।
এতিম শিশুর চাচাতো ভাই সোহেল মুন্না বলেন, মামুদগ্রামে ওই দুই শিশুর দাদির নামে একটি বাড়ি, ৩০ বিঘার লিচু বাগান, উপজেলার যোগেন্দ্রনগরের ১৫ বিঘার ফসলি জমি, পৌরসভার চাঁচকৈড় বাজারের গোদিঘর এবং নারিবাড়ীর মিল-চাতাল দেখভালের জন্য সামসুল হককে তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে রেখেছেন ইউসুফ আলী। এছাড়া ঢাকার একটি ফ্ল্যাট এবং রাজশাহীর একটি বাড়ি দখলে রেখে এতিম শিশু দুটিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ উত্তরাধিকার সূত্রে নাতি-নাতনি এসব সম্পদের বর্তমান মালিক। কিন্ত ইউসুফ আলী প্রয়াত স্ত্রীর সম্পদ ওয়ারিশ মোতাবেক বণ্টন না করে জবর-দখল করছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভিন রানু বলেন, চাকরির কারণে দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। সেই সুযোগে তার দুই সন্তানকে বঞ্চিত করতে প্রভাব খাটিয়ে সামসুল হক নামের এক ব্যক্তিকে ব্যবহার করে সব সম্পদ দখল করেছেন তার শ্বশুর ইফসুফ আলী।
অভিযুক্ত সামসুল হক বলেন, লিচু বাগানসহ বেশ কিছু জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। প্রতিপক্ষের মামলায় হাজত বাস করেছেন। এবার তারা লিচু বাগানটি বিক্রি করতে পেরেছেন। মূলত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ইউসুফ আলীর নির্দেশে এসব জমি দেখভাল করছেন।
ইউসুফ আলী বলেন, নাতি-নাতনি ছোট হওয়ায় সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা। সময়মতো ওয়ারিশদের সব সম্পদ বুঝিয়ে দেবেন।