প্রচলিত ভোক্তা অধিকার আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এ আইনের আধুনিকায়নে কাজ চলছে। কয়েকটি কর্পোরেট কোম্পানি পণ্যমূল্য বৃদ্ধির লক্ষে অবৈধ মজুদ ও উৎপাদন বন্ধের মতো অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এসকল কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৫৪টি মামলা করা হয়েছে। অবৈধ মজুদদারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
শনিবার (২৭ মে) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে রাজনৈতিক অঙ্গিকার খুবই জরুরী। রাজনৈতিক দলসমূহ আগামী নির্বাচনের আগে ইশতেহারে ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। আসন্ন ঈদ উল আযহায় পশুর হাটে কৃত্রিম সংকট নিরসন ও দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিত্যপণ্যের ভেজাল ও নকল বিরোধী অভিযানসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাউকে হয়রানীর উদ্দেশে নয় বরং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে আইনি কাঠামোর মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে। ভোক্তা অধিকার আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত কার্যক্রম আরো জোরদার হলে জনগণ তার সুফল পাবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, প্রতিটি ভোক্তারই নিরাপদ, মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ভোক্তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। চটকদার বিজ্ঞাপন, নকল ও ভেজাল পণ্য বিক্রয়, চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া, ক্রয় মূল্য থেকে অত্যধিক বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রয়, পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি, কালোবাজারীসহ বিভিন্ন অসাধু কার্যকলাপের কারণে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে। এই ধরণের প্রতারণার শিকার ভোক্তারা জানেন না কোন প্রক্রিয়ায় এর প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণসহ নিকটস্থ থানায় অথবা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে প্রতিকার পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, অনলাইনে, মুঠোফোনে অথবা ইমেইলে এই অভিযোগ করা যায়। বিদ্যমান আইনে ভোক্তা কোন প্রতারণার অভিযোগ করতে চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হয়। এরপর কয়েক দফা শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীর জন্য ভোক্তাকে কয়েক দিন সরেজমিনে হজির হতে হয়। সময়, শ্রম ও যাতায়াতের ভোগান্তির কারণে ভোক্তারা অনেক সময় ভোক্তা অধিকার আইনের সুযোগ নিতে নিরুৎসাহিত হয়। এসব কারণে ভোক্তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য অনলাইনে শুনানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সুফল পেতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেন- ১) দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গিকার প্রদান করা। একই সাথে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী মেনুফেস্টে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা ২) অভিযান পরিচালনায় ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরকে ম্যাজিট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা ৩) একক সংস্থার মাধ্যমে বাজার পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা। ৪) ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অন্তভুক্তি রাখার বিষয় নিশ্চিত করা ৫) মজুতদারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা ৬) দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করাসহ অনলাইনে শুনানি করা ৭) ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যাপক প্রচার প্রচারণাসহ সিন্ডিকেট কালোবাজারির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির শাস্তি টিভিসি, বিলবোর্ডসহ বড় বড় বাজারগুলোর সামনে প্রদর্শন করা ৮) ব্যবসায়ীদের জন্য ভোক্তা অধিকার বিষয়ক অরিয়েন্টেশন কোর্স চালু করা এবং স্থায়ীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ কোর্সে ভোক্তা অধিকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা ৯) নগর এলাকায় অঞ্চল ভিত্তিক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠা করা ১০) ভোক্তা অধিকার আদায়ে নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে সামাজিক জাগরণ তৈরি করা।
“ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সুফল পাওয়া যাচ্ছে” শীর্ষক ছায়া সংসদে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ন হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাহেদা পারভীন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু ইউসুফ ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ শাহরিয়ার।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক হিরযুন মীরা, স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।