সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

প্রযুক্তির বিকাশে অশুভ শক্তির নতুন হুমকি বাড়ছে: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ২০:৩৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে এখন বেশি কঠিন। কারণ অশুভ শক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক বিকাশ ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অশুভ শক্তির নতুন হুমকি বাড়ছে।

গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে (বিআইসিসি) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। বাংলাদেশ সর্বদা শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার সবই করবে। আমরা যে কোনো সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমরা অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না। কারণ নারী, শিশু ও প্রতিটি পরিবার এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে । তাই তাদের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।'

শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি মানুষকে আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা এটাও দেখছি যে, অপশক্তিগুলোও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। কাজেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের জটিল বহুমাত্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন যে, আর এজন্য, উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে শান্তিরক্ষা মিশনকে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।' 

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও বিপজ্জনক অঞ্চলে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া এবং ভূখণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক, অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করছি।'

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস। অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মদানকারী বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় । অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ইন গ্লোবাল পিস' শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। নিহত পাঁচ জন শান্তিরক্ষীর পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন । তিনি পাঁচ জন আহত শান্তিক্ষীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারন্যাশনাল পিসকিপার জার্নাল উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের থিম—'পিস বিগিনস উইথ মি' খুবই সময়োপযোগী বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, এই নীতিবাক্য নিয়ে আমরা আমাদের জাতির পিতার দেখানো পথে বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী দেওয়ার চেষ্টা করব—এটাই আজ আমাদের অঙ্গীকার ।

বর্তমানে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৪৩৬ শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে আর এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মোতায়েন শান্তিরক্ষীদের মোট সংখ্যার প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ । এর মধ্যে ৫৭২ জন বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীও রয়েছেন। শেখ হাসিনা আরো বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আরো নারী শান্তিরক্ষী পাঠানোর অনুরোধ করায় আমরা নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৬৩টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের ১৪টি মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চারটি ও বাংলাদেশ পুলিশের তিনটি দল এসব মিশনে কাজ করছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ সুদানের আবেইতে একটি ফোর্স প্রোটেকশন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করেছে, যেখানে মালিতে একটি কুইক রি-অ্যাকশন ফোর্স হিসেবে একটি মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি কোম্পানি, কঙ্গোতে একটি বিস্ফোরক অস্ত্র নিষ্পত্তি প্লাটুন এবং মধ্যাঞ্চলে একটি লেভেল-২ হাসপাতাল কনটিনজেন্ট যুক্ত করেছে। মালিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি নতুন আর্মড ইউটিলিটি হেলিকপ্টার ইউনিট, বেস ডিফেন্স কনটিনজেন্ট হিসেবে একটি নতুন মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি কোম্পানি এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এয়ারফিল্ড সাপোর্ট ইউনিট মোতায়েন রয়েছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ফোর্স কমান্ডার, ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার এবং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতি' প্রস্তাব পেশ করে—১৯৯৯ সালে যা সর্বসম্মতিভাবে গৃহীত হয়। তখন থেকে প্রতি বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগশিপ রেজুলেশন “শান্তির সংস্কৃতি' সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। 

শেখ হাসিনা আরো বলেন, জাতিসংঘ ২০০০ সালকে 'আন্তর্জাতিক শান্তির সংস্কৃতির বছর' ও ২০০১-২০১০ কে শান্তির সংস্কৃতি ও অ-সংঘাতের দশক' ঘোষণা করে। 

তিনি বলেন, এগুলো বাংলাদেশের জাতির পিতার বৈদেশিক নীতিকেই অনুসরণ করে। তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ছিলেন দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। যার ফলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের 'ব্লু হেলমেট' পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে।

ইত্তেফাক/এএএম