শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মহামারি পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে

যশোরে একাধিক উৎস কলেরার জীবাণু শনাক্ত

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ০৫:০০

যশোরের কলেরা জীবাণু ছড়িয়েছে একাধিক উৎস থেকে। শহর থেকে গ্রামের সব রকমের উৎস পানির দূষণ দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এটাকে ‘আউটব্রেক কন্টিনিউ’ বললেও এখনো ‘এপিডেমিক’ বা মহামারির পর্যায়ে গেছে এমনটি বলতে নারাজ। তবে ‘এনডেমিক’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এনডেমিক হলে দীর্ঘ মেয়াদে এই রোগের জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কমিউনিটিতে থেকে যায় এবং আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ পেলেই বিস্তার ঘটতে থাকে।

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

সূত্র জানায়, ডায়রিয়ার মারাত্মক বিস্তারের পরিস্থিতিতে জাতীয় রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর রোগতত্ত্ব গবেষণা দল দ্বিতীয় বারের মতো যশোরের উপদ্রুত অঞ্চল পরিদর্শন ৩০ মে সম্পন্ন করেছে। প্রথম পরিদর্শনের গোপনীয় প্রতিবেদনে দলের প্রধান ডা. মোসাম্মাৎ জেবুন্নেসা কলেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতার রোগী বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের অনুরোধে আইইডিসিআর-এর গবেষণা দল দ্বিতীয় বার এই অঞ্চল পরিদর্শন করেন। সপ্তাহকালের গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে তারা চূড়ান্ত বিশ্লেষণে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়। দ্বিতীয় দফার গবেষণায় শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের যেসব এলাকায় রোগী বেশি, সেসব এলাকা বেশি পরিদর্শন করেন। এতে তারা নিশ্চিত হয়েছেন ‘পয়েন্ট সোর্স’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি উৎস থেকেই জীবাণুর বিস্তার ঘটেনি। বরং ‘মাল্টিপোল সোর্সে বা একাধিক উৎস’ জীবাণুর অস্তিত্ব রয়েছে। এমনকি গ্রামের সাবমার্সিবল টিউবওয়েলের পানিতেও জীবাণু পাওয়া গেছে। প্রথম বারের গবেষণায় শহরের সাবমার্সিবল টিউবওয়েলেও কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছিল। এবারের গবেষণায় পানির পাশাপাশি অন্যান্য খাবার থেকেও জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছেন।

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

গবেষক দলটি জেলার বিভিন্ন ড্রেন, বাসাবাড়ির টয়লেট, পানির পাইপলাইন, স্যুয়ারেজ লাইনের তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে পান অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থায় এগুলোর সহবস্থান রয়েছে। পাশাপাশি এমনকি স্যুয়ারেজ লাইনের সঙ্গেও মিশে রয়েছে পানির লাইন। এতে জীবাণুর বিস্তার দ্রুত ঘটছে। 

এ প্রসঙ্গে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, পানির লাইন স্যুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে মিশে গেছে, এটা অনুমাননির্ভর। গরমের সময় ডায়রিয়া বাড়ে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে মানুষ কিছুটা উদাসীন বলেই এমনটা হয়। আমাদের জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। 

যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে পানির লাইনের সমস্যার কারণে কলেরা-ডায়রিয়া হচ্ছে। কিন্তু কোথায় হচ্ছে আমাদের দেখাক। আমরা তো খুঁজে পাচ্ছি না। তবে পানিতে আয়রন ও আর্সেনিক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব পরিষ্কার করতে ব্লিচিং ওয়াশ চলছে। জরুরি ভিত্তিতে ১৫টি সাবমার্সিবল টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে। আর যশোর পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছেন তারা পানির লাইনে ৪২টি লিকেজ পেয়েছেন, যেসব লিকেজ দিয়ে জীবাণুর বিস্তার ঘটা সম্ভব। এসব লিকেজ মেরামতসহ আরও লিকেজ খুঁজে বের করার কাজটি চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এপ্রিল মাসে গড়ে ২৮ জন রোগী ভর্তি হলেও মে মাসে বেড়ে ৩৩ জনের বেশি সংখ্যায় পৌঁছেছে। পাঁচ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পাশাপাশি করোনার রেড জোন ওয়ার্ডকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, শিশুরা রোটা ভাইরাস দ্বারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু বড়রা চাল ধোয়া পানির মতো পায়খানা করছে—যা কলেরার স্পষ্ট আলামত।

ইত্তেফাক/এমএএম