ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোহামেডান কাল প্রথম ম্যাচ খেলল বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে। দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে বসুন্ধরা কিংস ২-১ গোলে হারিয়েছে মোহামেডানকে। বসুন্ধরা কিংসের নিজেদের মাঠে দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াইটা একটু স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। স্টেডিয়ামে ঢোকার আগেই সাদাকালোদের জন্য অভিনন্দন লিখে রাখা হয়েছিল।
গ্যালারিতে দর্শক আনা হয়েছে। তাদের গায়ে তুলে দেওয়া হয়েছে বসুন্ধরার জার্সি। অনেকেই পরিবার নিয়ে এসেছিলেন আশপাশ এলাকা থেকে। এ সময় গ্যালারিতে ফ্লেয়ার ছড়িয়ে লাল রঙে ভরিয়ে দেওয়া হয়। আর খেলা শেষে গ্যালারি থেকে ফোটানো হয় আতশবাজি। প্রায় অর্ধশত বাজি ফোটানা হলে আশপাশের মানুষ আকাশে চোখ মেলেন। দেশের ঘরোয়া ফুটবলে এমন ছবি দেখা যায় না। আয়োজক কিংসের ম্যানেজমেন্ট যেটা করল।
কিছুদিন আগেই কিংসের এই মাঠে নতুন ফ্লাড লাইট স্থাপন করা হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে আলোর ছটা দেখা যায়। এতে করে কৌতূহলী মানুষের আগ্রহও বেড়ে যায়। তাই হয়তো কিংস কর্তৃপক্ষ স্টেডিয়ামের পেছনের দিকের রাস্তার দরজাটা খুলে দিয়েছেন সাধারণ দর্শকের জন্য। বেসরকারি ভাবে নির্মিত স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আসন সংখ্যা কমবেশি ১০ হাজার। নিজেরা দর্শক আনছে বলে স্টেডিয়ামে ফুটবলীয় পরিবেশ গড়ে উঠছে। ফুটে উঠছে ফুটবলের আসল সৌন্দর্য্য।
তবে গরমের কারণে কষ্টটা বেড়ে গিয়েছিল। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান চাইছেন আগামীতে পুরো ম্যাচই ফ্লাড লাইটের আলোয় আয়োজন করতে। এটি যদি হয় তাহলে গরমের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
এদিকে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কিংস। এখন তারা লড়াই করছে লিগের শেষ কয়টি ম্যাচে, নিয়মরক্ষার জন্য। যেখানে হারলেও ক্ষতি নাই। তবুও এদিন খুব সাবধানে পা ফেলেছে তারা। হাজার হলেও মোহামেডান ফেডারেশন কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। দেশের ফুটবল দর্শক মনে দারুণভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে মোহামেডানের আক্রমণটা আরো শক্তিশালী হতো, যদি অধিনায়ক সুলায়মান দিয়াবাতে খেলতে পারতেন। লিগের এই ম্যাচটা খেলতে পারলেন না সুলায়মান, তার নামে তিন হলুদ কার্ড রয়েছে। কিংসের বিপক্ষে সুলায়মানকেই অনুভব করলেন দর্শক। দূরদূরান্ত থেকে মোহামেডানের খেলা দেখতে আসা সাদাকালো সমর্থকরা বুঝলেন দিয়াবাতে থাকলে আক্রমণের জায়গাটা ক্ষুরধার হতো, হয়তো জয় নিয়েও মাঠ ছাড়তে পারত মোহামেডান।
কিংসের যারা বেঞ্চে বসে থাকেন সেখান থেকে বেশ কয়েক জনকে কাল মোহামেডানের বিপক্ষে নামিয়েছেন স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন। কিংসের বেঞ্চও শক্তিশালী। তারপরও খেলার শুরুতেই বসুন্ধরা গোল হজম করে পিছিয়ে যায়। মোহামেডানের নাইজেরিয়ান ইমানুয়েল সানডের গোল ছিল দৃষ্টিনন্দন। দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় মোহামেডান। তখনও কিংসের কর্মকর্তারা বসেও শেষ করতে পারেননি। চেয়ারে বসে কুশল বিনিময় করতে করতেই দেখে তাদের জালে বল।
তবে ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় লাগেনি তাদের। মোরসালিন আর ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক রবসনের সুন্দর মুভমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা বলে আরেক ব্রাজিলিয়ান মিগুয়েল গোল করে সমতা আনেন। প্রথমার্ধেই ২-১ গোলে এগিয়ে যায় কিংস। আবার সেই মোরসালিনের বাড়ানো বলে রকিব দারুণভাবে গোলে পরিণত করেন।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সংখ্যা বাড়াতে সুযোগ পেলেও মিগুয়েল, মোরসালিন এবং রবসন পালাক্রমে মিস করেন। আর সমতা আনতে মোহামেডানের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা নষ্ট করেন বাপ্পি। ইমানুয়েল সানডের বলটা কিংসের পোষ্টের নিচে লেগে ফিরে আসলে সামনে দাঁড়ানো বাপ্পি বাইরে না ফেললে ম্যাচটা ঘুরেও যেতে পারত।
ম্যাচের শেষ দিকে লালকার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন মোহামেডানের উজবেক ফুটবলার মুজাফফর। রেফারি আনিসুর রহমান খেলাটা ভালো চালাননি। কর্নার হয়েছে তিনি দিয়েছেন থ্রো, আবার কর্নার হয়েছে তিনি দিয়েছেন ফাউল।