বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

প্রত্ননিদর্শন ভাসুবিহার, পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটক

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ১৫:১৭

পুন্ড্রনগর খ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড় ও এর আশপাশের এলাকায় মাটির নিচে আড়াই হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এমন একটি দুর্লভ নিদর্শন হলো ভাসুবিহার।

মহাস্থানগড় থেকে চার মাইল দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত ভাসুবিহার। দুটি বৌদ্ধবিহার এবং একটি মন্দির নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বিহার। প্রাচীন চীনা পর্যটকরা ভাসুবিহারকে চিহ্নিত করেছেন, ‘পোঁ-শি-পো’ নামে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা একেবারেই না থাকা ও পরিবেশ খারাপ হওয়ায় ভাসুবিহার ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটক।

বগুড়ার শিবগঞ্জের বিহার এলাকায় এর অবস্থান। গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে অনেকটাই অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে প্রাচীন এ পুরাকীর্তি।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্রে থেকে জানা গেছে, বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে প্রায় চার মাইল উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ভাসুবিহার স্থানীয়দের কাছে নরপতির ধাপ নামে পরিচিত। ইংরেজি ৬৩৮ সালে সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে এই বিহার পরিদর্শনে আসেন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং। পরিদর্শনে এসে এই বিহারের প্রেমে পড়ে যান তিনি। একটানা তিন মাস অবস্থান করেন। এখানে ভাসুবিহারে একটি সুউচ্চ চারতলা বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। যেখানে সাত শতাধিক বৌদ্ধ পণ্ডিত শিক্ষা গ্রহণ করতেন। ১৮৭৯-৮০ সালে ভাসুবিহার পরিদর্শন করেন স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম। এখানে এসে তিনি এই বিহারকে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বর্ণিত স্থান হিসেবে শনাক্ত করেন।

সূত্র জানায়, ১১ শতকের দিকে শৈবধর্মীদের উত্থান ও বৌদ্ধদের প্রতি তাদের ঘৃণা, অবজ্ঞা ও শত্রুতায় অনেকটা ধর্মহীন সমাজে পরিণত হয় বৌদ্ধরা। ফলে ভাসুবিহারের এই সুউচ্চ প্রাসাদটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এরপর পাল রাজাদের অনেকেই রাজত্ব ছেড়ে শেষ জীবনে সেবক হিসেবে বাস করতেন এখানে। আর এ কারণেই এই বিহারের নাম পরিচিতি পায় নরপতির ধাপ হিসেবে। পরে পাল বংশের অবসান ঘটলে পতিত অবস্থায় বিহারটি ধীরে ধীরে ধংসপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে প্রথম বারের মতো খনন করা হয় ভাসুবিহার। খননের পর এখানে দশ শতকের দুটি মন্দিরের ভিত্তিমূল ও দুটি আয়তাকার প্রাসাদ দেবালয়ের ভিত্তিমূল আবিষ্কৃত হয়।

সম্প্রতি উক্ত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেকটাই অযত্ন ও অবহেলায় সুনসান নীরব হয়ে পড়ে আছে ভাসুবিহার। স্থানীয় কয়েক জন রাখাল গরু ও ছাগল চরাচ্ছেন এখানে। দর্শনার্থীদের বসার মতো কোনো বেঞ্চের ব্যবস্থা নেই। কাঁচাঘাসের ওপরই বসতে হয়  পর্যটকদের। ঝড়বৃষ্টির সময় আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো ছাউনিও নির্মাণ করা হয়নি। নির্মিত হয়নি কোনো শৌচাগারও। এছাড়া এখানে কোনো দোকানঘরও নেই।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পর্যটক ঘুরতে আসেন। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ খারাপ হওয়ায় ভাসুবিহার ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, ঐতিহাসিকভাবে ভাসুবিহার গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকার মতো এর তেমন পরিচিতি নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে এর পরিচিতি বাড়লে চীন, জাপানসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখানে আসবেন। ভাসুবিহারে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট স্থাপন, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা, সৌন্দর্যবর্ধন, পিকনিক শেড, রেস্টহাউজ, শৌচাগার ও পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে এখানে দেশি ও বিদেশি পর্যটকের আগমন অনেকগুণ বেড়ে যাবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের বাজেটের প্রয়োজন। আমাদের সীমিত বাজেটের কারণে রুটিন মেরামত ছাড়া বেশি কিছু করা সম্ভব হয় না।

ইত্তেফাক/আরএজে