ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আমরা সবাই ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করি। বাজারে অনেক ধরনের ব্রাউজার পাওয়া যায় যেমন, Mozilla firefox, Brave, Opera আবার নির্দিষ্ট কোম্পানির কিছু নির্দিষ্ট ব্রাউজারও আছে যেমন, গুগলের Chrome, মাইক্রোসফট এর Microsoft edge, অ্যাপলের Safari। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কোন ব্রাউজার সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করেন, ধরুন উইন্ডোজ-এর ক্ষেত্রেই? বেশিরভাগ উত্তর আশাকরি হবে গুগল ক্রোম। আর তাদের বড় একটা অংশ আগে ছিল মজিলা ফায়ার-ফক্স।
আমরা জানি বর্তমানে গুগল ছাড়া আমাদের এক মিনিট ও চলে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহূত সব প্রোডাক্টই হচ্ছে গুগলের। কয়েকদিন আগে যখন আমি ফায়ার-ফক্স দিয়ে ইউটিউবের ভিডিও এডিট করতাম প্রায় সেটা হ্যাং করতো এবং অনেকক্ষনের জন্য আটকে থাকতো। এটা নিয়ে যখন আমি ইউটিউবের টুইটারে টুইট করি তারা আমাকে অন্য ব্রাউজার ব্যবহার করতে বলে। আমি ক্রোম ব্যবহার করি এবং প্রবলেম সলভড! হটাত্ আমার Google Hangout-এর প্রয়োজন পরে। ফায়ারফক্স দিয়ে ঢুকার চেষ্টা করি, কাজ হয় না। সাফারি ট্রাই করি, একই সমস্যা। ইন্টারনেটে এমন হাজার হাজার ইউজারদের অভিযোগ ছিল ইউটিউব নিয়ে যে, ভিডিও ভাল ভাবে রান হয় না এডিট করা যাচ্ছে না। এই সমস্যারও এক মাত্র সমাধান ছিল গুগল ক্রোম।
নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া
কিছু দিন আগে গুগল তাদের ভিডিও কলিং Google Meet মাইক্রোসফট-এর edge এ ব্লক করে দেয়। তার কিছু সময় পর ইউটিউবের নতুন ভার্সন ব্যবহারও ব্লক করে দেয় মাইক্রোসফট Edge থেকে। এমনকি Google Earth এর লোগো গুগল ক্রোমের মত করে তৈরি করা যেন একটি নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের এই সুবিধা দেয়া হচ্ছে। Microsoft Edge-এর বেটা ভার্সনে এখনো হ্যাং আউট এবং ইউটিউব ভালভাবে রান হয় তার মানে হয়তো গুগল এখনো এটাকে চেক করেনি।
ইচ্ছেকৃত বাগ তৈরি
ইউজাররা যাতে ভালোভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে না পারে এজন্য গুগল নিজে থেকে বিভিন্ন বাগ তৈরি করা শুরু করে, এমনটাই দাবি করে অনেকে। ফায়ারফক্স-এর ইঞ্জিনিয়াররাও দাবি করে গুগল তাদের পুরাতন API ব্যবহার করছে ফায়ারফক্স-এর জন্য এবং এতে করে ইউটিউবের গতি ফায়ারফক্সে অনেক কম এমনকি এটা ক্রোম থেকে পাঁচ গুন কম। তারা আরও দাবি করে গুগল ইচ্ছে করেই ফায়ারফক্সের জন্য শত শত বাগ তৈরি করেছে যাতে করে ব্যবহারকারীরা ফায়ারফক্স ছেড়ে গুগল ক্রোম ব্যবহার শুরু করে।
বৈষম্যে বাকিরা
আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে যাই তাহলে দেখব গুগল এই পথে প্রথম না। এর আগে বাকিরাও এমন বৈষম্য করেছে। Mozilla, Apple, Microsoft-এর মত কোম্পানি তাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সার্ভিস তাদের নিজেদের ব্রাউজারে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। মাইক্রোসফটও এক সময় তাদের Internet Explore দিয়ে এই ক্যাটাগরিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
গুগলের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল
গুগল আসলে এর মাধ্যমে চায় সবাই যাতে গুগল ক্রোম ব্যবহার শুরু করে এবং তারা যেন ইন্টারনেট ব্রাউজারে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। একজন ব্যবহারকারী কখনো একই সাথে অনেকগুলো ব্রাউজার ব্যবহার করবে না। যার মাধ্যমে একই সাথে সবগুলো কাজ ভালভাবে করা যাবে স্বাভাবিক ভাবেই তারা এটা ব্যবহার করবে। আর গুগল এই সুবিধাটাকেই কাজে লাগাতে চায়।
গুগল এই সিদ্ধান্তে কত দিন অটল থাকতে পারবে
গুগল তার এই আধিপত্য দিয়ে কত দিন টিকে থাকতে পারে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বর্তমানে টেক কোম্পানিগুলো একেকটা আরেকটার উপর বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল। যদি গুগল সবার থেকে আলাদা হয়ে কিছু করতে চায় সেটা কখনো সম্ভব না। আর অতীত সেটাই বলে। আমরা যদি মাইক্রোসফটের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, একটা সময় তারা বাকি সব কোম্পানিদের উপর রাজত্ব করছে। তারা ছিল অন্য কোম্পানিদের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বী।
গুগলের জন্য বড় হুমকি
আমরা জানি গুগল বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং লাভবান বিজ্ঞাপণী মাধ্যম। গুগলের আয়ের প্রায় ৮০% আসে বিজ্ঞাপণ থেকে। গুগলের বিজ্ঞাপণগুলো ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় এবং এতে গুগল ক্রোম ট্র্যাক করতে সাহায্য করে যে আপনি আসলেই বিজ্ঞাপণ দেখছেন কিনা এবং আপনি যে ধরনের বিজ্ঞাপণ চান সেটা তারা দেখাতে পারছে কিনা।