সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন (১৭২৩-১৭৭৫) রচিত গীতিকাব্য ‘এমন মানব জমিন রইল পতিত, আবাদ করলে ফলত সোনা’—এ প্রতিপাদ্য বুকে ধারণ করে শিল্পজমিনে ফলান সুফলার অণুবীজ কর্ষণ সেই জমিনের সুদক্ষ চাষা। লেখক-চিন্তক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক সম্পাদিত সৃজন প্রয়াসী সাময়িকপত্র লোকায়তর পথ ধরে তাঁরই ভাবশিষ্য ড. মিজান রহমান ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশ করেন ‘কর্ষণ’—সামপ্রতিক ভাবনার মুখপত্র লিটল ম্যাগাজিনটি।
চলতি সংখ্যায় সূচিবিন্যাস ‘বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবোধ ও যবন’ প্রবন্ধ দিয়ে। ব্রিটিশশাসিত বাংলায় অবস্থান করে তুর্কি-মোগল শাসিত বাংলার কথা ভেবেও বঙ্কিম হয়ে ওঠেন প্রবলভাবে স্বাধীনতাকামী। মুসলিম-হিন্দু দৃষ্টিভঙ্গি সম্যক আলোচনা তুলে ধরেছেন লেখক-প্রাবন্ধিক আবুল কাসেম ফজলুল হক। নয়া-উপনিবেশ, পুনঃউপনিবেশ কিংবা উত্তর-উপনিবেশের পরিপ্রেক্ষিত ঘুরেফিরে উঠে এসেছে বি-উপনিবেশ ‘পরাধীনতার আলাপ-বিলাপ’ লেখক ফকরুল চৌধুরীর উল্লেখিত প্রবন্ধে। রবীন্দ্রভ্রাতা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর জামাতা সবুজপত্রের সুদক্ষ মনীষা লেখক-চিন্তক প্রমথ চৌধুরী এবং রবীন্দ্রনাথের তত্কালীন সবুজপত্রকে ঘিরে বোদ্ধা সাহিত্যমানসে প্রমথ চৌধুরীর রচনা বিন্যাস পাঠকদের মধ্যে বিস্ময় জাগায়।
বিস্ময় জাগে আরো সবুজপত্রে ১০৬টি সংখ্যার মধ্যে ৬৩টিতেই রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রকাশের সংখ্যা ১২৫টি। আর প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদকীয় ধরনের লেখাগুলো বাদে স্বনামে লেখা ৯৮টি এবং ‘বীরবল’ ছদ্মনামে ৫২টি মিলিয়ে মোট ১৫০টি লেখা প্রকাশ হয় সবুজপত্রের লেখক প্রমথ চৌধুরীর। ৯টি পর্বে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে লেখক ফকরুল চৌধুরী প্রমথ-রবীন্দ্র সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য-উপাত্ত তুলে আনেন যা কর্ষণের এ সংখ্যাটিকে বেশ আলোকিত করেছে। প্রবন্ধসূচিতে আছে প্রাবন্ধিক বেনজীন খানের ‘ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প : বাংলাদেশের উদ্বেগ’, লেখক-গবেষক হামিদ রায়হানের ‘বি-উত্তরৌপনিবেশিক সংযোগ’। অনুবাদ সাহিত্যসূচিতে আছে অনন্ত উজ্জ্বলের ‘মার্গারেট অ্যাটউডের কবিতা’। মার্গারেট অ্যাটউডে যিনি কিছু বিষয় ক্যানাডিয়ান সাহিত্য উপস্থাপন করেছেন যা কি না আমেরিকান এবং ব্রিটিশ সাহিত্য থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ফর্মের। ছোটগল্পের সূচিতে আছেন ধ্রুব এষ এবং মনি হায়দার। লিখেছেন আরো অনেক গুণী সাহিত্যিক।
মুখপত্র ‘কর্ষণ’ প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের দখিনের জেলা বরিশালের স্বরূপকাঠি থেকে। এ সংখ্যার মুদ্রিত মূল্য ১০০ টাকা।