শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ফসলি জমিতে ইটভাটা, কৃষি ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এলাকাবাসী

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩, ২২:০৭

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ও ফসলি জমিতে এস ব্রিকস নামের এক ইটভাটা গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন ওই এলাকার সাধারণ কৃষিজীবী মানুষ। 

উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর (শালুরমোড়) এলাকার ঘটনাটি এটি। এ নিয়ে (১১ মে) জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন সালমান কায়সার ইয়াহিয়া নামের এক ব্যক্তি। দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো প্রতিকার। 

প্রতিকার না পেয়ে রোববার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন সালমান কায়সার ইয়াহিয়া, সেলিম মিয়া, বাবুল হোসেন, মুকুল মিয়া, মক্কার হোসেন, বাবুল মিয়া, সাদিকুল ইসলাম, এরশাদুল হক, আশরাফুল ইসলাম লাল, আক্তার হোসেন, রাজ্জাক মিয়া, আইয়ুব হোসেনসহ অনেকে। 

রৌমারীর কৃষিজমিতে ইটভাটা। ছবি: ইত্তেফাক

তারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ার এস ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ফলে বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দিন দিন মানুষ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আশেপাশের জমি থেকে মাটি কেটে ইট তৈরি করায় মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতি একরে জমিতে ২০০-৩০০ মণ ধান, ১৫০-২০০ মণ ভুট্টা, ১৬০-১৭০ মণ পাট পাওয়া যেতো। এ সব জমিতে উৎপাদন বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। 

তারা আরও অভিযোগ করেন, এ ইটভাটার ধোঁয়ায় চরগয়টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ, হাফেজীয়া মাদ্রাসা, ছাট কড়াইবাড়ী গ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দাঁতভাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্প, কাউনিয়ারচর গ্রাম, শালুর মোড় এলাকা, খেতার চর, ছাটকড়াইবাড়ী এলাকার মানুষ পরিবেশ দূষণে ভুগছেন। এ ইটভাটা বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।


  
শিক্ষার্থীরা বলেন, ভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে তাদের বিদ্যালয়ের দিকে কালো ধোঁয়া আসে। এতে তাদের অনেক সময় দম বন্ধ হয়ে আসে। এছাড়া এ ধোঁয়ায় নানান শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়।

স্থানীয় প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক, সাইফুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, বদিউজ্জামানের দাবি, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীসহ এ এলাকার মানুষদের। এটা এখন রোধ করতে না পাড়তে দীর্ঘ সময় ভোগান্তি পোহাতে হবে।

দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম রেজাউল করিম বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইটভাটাটি গড়ে তোলায় ফসল ও মানুষদের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ইটভাটাটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি। 

এস ব্রিকস ইটভাটার মালিক সফিয়ার রহমান বলেন, তিনি নিয়মনীতি মেনে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইটভাটা চালু করার জন্য ছাড়পত্রও নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ অসুস্থ হলে কি করার আছে। ইট যদি না থাকতো তাহলে তালায় তালায় ভবন হতো না। যদি কর্মকর্তারা ইটভাটা বন্ধ করতে বলে তাহলে বন্ধ করা হবে। 

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ওই ইটভাটার বিষয়ে আমার কাছে প্রত্যয়নপত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। পরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি ইটভাটার বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।  

কুড়িগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এরপর ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হবে।

ইত্তেফাক/পিও