শিশুদের অত্যাধুনিক চিকিৎসার জন্য আলাদা বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল করার প্রস্তাব করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেলে যেখানে একই বেডে ২ থেকে ৩টি শিশুকে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়, সেখানে তাদের জন্য আলাদা হাসপাতাল করা হলে চিকিৎসাসেবার মানও উন্নত হবে বলে মত তাদের।
শনিবার (৩ জুন) দুপুরে হাসপাতালটির সভাকক্ষে আয়োজিত ‘Annual Audit and Launching of Yearbook’-এর সেমিনারে এসব কথা বলেন চিকিৎসকরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সিরাজুল ইসলাম, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. আহম্মেদ হোসেন হারুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন ডা. শাহারিয়ার নবি শাকিলসহ অনেকে।
তাই ঢাকায় সরকারি একটি শিশু হাসপাতাল করার প্রয়োজনীতা তুলে ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু বলেন, বেডের সংখ্যার চাইতে ঢামেকে কয়েক গুণ বেশি শিশু রোগী ভর্তি থাকে। শিশুদের আরও উন্নত চিকিৎসার কথা চিন্তা করে হলেও ঢাকায় সরকারি একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল করা দরকার। রাজধানীর শ্যামলীতে যেই শিশু হাসপাতালটি রয়েছে তা স্বায়ত্তশাষিত। কাজেই পুরোপুরি সরকারি একটি হাসপাতাল করা খুবই প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ঢাকা মেডিকেল সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় হাসপাতাল। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী এখানে চিকিৎসা নেয়। কাউকে ‘না’ বলা হয় না। সব জটিল চিকিৎসাই এখানে সম্ভব।
চিকিৎসকদের আন্তরিকতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের দক্ষতা এবং যোগ্যতার ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেলের জুড়ি নেই। কিন্তু তারা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পায় না। ফলে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল থেকে মেধাবী চিকিৎসকরা পাস করে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। তাদের যদি সেই সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় তাহলে তারাও দেশে চলে আসবেন।’
শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টিসহ চিকিৎসকদের যে সকল প্রস্তাবনা রয়েছে সবকিছু নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনি আলোচনা করবেন।
সেমিনারটিতে ২০২২ সালের বাৎসরিক কার্যক্রমের উপস্থাপন এবং ২০১৪-২০২২ সালের সার্বিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হয়। যেখানে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৪ সালে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৩৩ জন। সেটি বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ১৬ হাজার ৩২১ জনে। ২০১৪ সালে জরুরি ভর্তি ছিল ১ হাজার ৩১৫ জন। সেটি বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ২ হাজার ৮৮ জন। রুটিন অপারেশন ২০১৪ সালে ছিল ৩২৮ টি। সময়ের পরিক্রমায় সেটি বেড়ে ২০২২ সালে ১ হাজার ৪৯৯টি অপারেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। ২০২২ সালে মোট সার্জারি সম্পন্ন হয় ৩ হাজার ১৬৭টি (রুটিন অপারেশন ১ হাজার ১৯৮টি ও জরুরি অপারেশন ১ হাজার ৯৬৯টি)।
এছাড়া এখন পর্যন্ত এই বিভাগ থেকে ৪১ জন চিকিৎসক এমএস ডিগ্রি সম্পন্ন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে বিশেষায়িত শিশু সার্জিক্যাল সেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে এই বিভাগে ১১টি গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে।
সেমিনারটির আয়োজন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগ, নিওনেটাল সার্জারি বিভাগ, শিশু সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ এবং শিশু ইউরোলজি বিভাগ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফ উল হক কাজল। তিনি জানান, ১৯৯৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১০টি বেড নিয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বেডসংখ্যা ৮৭টি, বহির্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ জরুরি চিকিৎসা এবং বিশেষায়িত চিকিৎসা (নবজাতক, শিশু ক্যানসার, শিশু ইউরোলজি, লেপারোস্কপি সার্জারি এবং কলোনোস্কপি) প্রদান করা হচ্ছে। এখানে ৮৭ টি বেডের বিপরীতে প্রতিনিয়ত ১৫৫ বা তার বেশি শিশু রোগী ভর্তি থাকে। সময়ের সাথে সাথে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, কাজের চাপ এবং বিশেষায়িত সেবাও বৃদ্ধি পেয়েছে।